যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু কমিশন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) আরোপকৃত ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে সংগঠন দুটি বলেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা র‍্যাব চরমপন্থা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. মো. রাব্বী আলম ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান শেরে আলম রাসুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই বাহিনীর প্রশংসা ও পুরস্কৃত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের অধীনে এই বাহিনী চরমপন্থা ও সহিংসতা দমনে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্বের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শত্রুদের প্ররোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ভুল তথ্য পেয়েছে, যার কারণে এই পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে, র‍্যাব ২০১৮ সালের পর অনেক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আদতে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে এই বাহিনী জড়িতই নয়। বরং দেশের উন্নয়নের ধারা ও সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এই বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) মতো র‍্যাবও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে দারুণ কাজ করে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ডা. মো. রাব্বী আলম এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান কৃষি প্রকৌশলী শেরে আলম রাসু এক চিঠিতে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ওই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভুল। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘আমরা মানবাধিকারকে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে নিতে বদ্ধপরিকর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিতে ও এ ব্যাপারে মনোযোগ আকর্ষণে যথাযথ উপকরণ ও কর্তৃত্ব ব্যবহার করে ওই প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করছি আমরা।’

চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান র‍্যাবের ওপর আরোপকৃত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানান। ডা. মো. রাব্বী আলম সন্ত্রাস, মাদক চোরাকারকারি ও অন্যান্য জঘন্য আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে যে রাষ্ট্রীয় সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে, সেই সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘আইনের মধ্যে থেকেই অপরাধ দমন যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, তাহলে দেশের স্বার্থে সেই লঙ্ঘনের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যথাযথভাবে তদন্ত করা হয়। কোনো সরকারি সংস্থার কোনো সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’

বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান শেরে আলম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ন্যায্য হয়নি। তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে অতিরঞ্জিত সংবাদের ভিত্তিতে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। মাদক চোরাকারবারিরা আত্মরক্ষার্থে সশস্ত্র অবস্থায় থাকে, যার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ হয়, হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশে গুরুতর অপরাধ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ২০০৪ সালে জন্ম হয় র‍্যাবের। এই বাহিনী সফলতার সঙ্গে মাদক চোরাকারবারি, সন্ত্রাস, চরমপন্থা, অপরাধ, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ দমন করে চলেছে। কঠিন এই কাজের স্বীকৃতি না দিয়ে এই বাহিনীর অপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বড় ধরনের একটি ধাক্কা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতি র‍্যাবের ওপর আরোপকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে এবং র‍্যাবের সাফল্যের জন্য এই বাহিনীকে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষে পুরস্কৃত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।