মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চল ও বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে শিগগিরই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এসব (রোহিঙ্গা) মানুষ যাতে দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে বিশ্বকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে। অন্যথায়, সংকট থেকে সৃষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা ইতিমধ্যে এর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।’ খবর বাসসের।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে প্যারিস পিস ফোরাম, ২০২১-এর চতুর্থ সংস্করণ ‘মাইন্ডিং দ্য গ্যাপ: ইমপ্রুভিং গ্লোবাল গভর্ন্যান্স আফটার কোভিড-১৯’-এ দেওয়া ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এই ফোরামের আহ্বান করেন এবং ফোরামের সভাপতি প্যাসকেল ল্যামি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়ে একটি বড় আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সাহায্য করেছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবশ্যই সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির এলাকা হতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো এটিকে অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা।’ এই অঞ্চলের প্রধান নেতাদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সময়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমাদের সব অংশীদারকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে চায়।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছে। আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমরা এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি স্তরে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বহু বছর ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সেনা ও পুলিশ দিয়ে অবদান রাখা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের মাধ্যমে তাঁর দেশ সেই অবস্থান ধরে রেখেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ও আর্থিক ব্যবস্থার গভীরে চলমান দুর্বলতাগুলো উন্মোচন করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, লাখ লাখ মানুষকে বাইরে রেখে পৃথিবীকে টিকা সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জীবন, বাড়িঘর এবং জীবিকা বাঁচাতে আমাদের জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্তে আটকে পড়া শত শত অভিবাসীর সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই জাতি, বর্ণ এবং জাতিগত ভিত্তিতে বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের নারী ও মেয়েদের সব কাচের দেয়াল ভাঙার অনুমতি দিতে হবে। আমাদের সবার জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমাদের কাজ এবং সম্পদের সাথে আমাদের কথার মিল রাখতে হবে।’
