বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। ছবি: রয়টার্স।

বেলারুশকে আরও নিষেধাজ্ঞা দিলে এর পাল্টা হিসেবে মিনস্ক ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। বৃহস্পতিবার এ হুমকি দিয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো। তিনি বলেন,
‘তারা (ইউরোপ) যদি আমাদের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে আমরাও জবাব দেব।’
ইউরোপে ঢোকার প্রত্যাশায় পোল্যান্ড সীমান্তে অবস্থান করা কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী এখন তীব্র ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। এ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগই ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে গেছেন। খবর বিবিসির।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারা বলছেন, বেলারুশ এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে ঢোকানোর লোভ দেখিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে এনে জড়ো করেছে। মিনস্ক প্রথম থেকেই অভিযোগটি অস্বীকার করে আসছে।

বেলারুশকে ‘শিক্ষা দিতে’ ইইউ তাদের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার বেলারুশের দীর্ঘদিনের শাসক লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন, যেটি বেলারুশ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গেছে, সেটি নিয়ে ভয় দেখিয়ে বলেন, “আমরা ইউরোপকে গরম রাখি, আর তারা আমাদের হুমকি দেয়। এখন আমরা যদি প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিই? সে জন্যই পোল্যান্ড, লিথুনিয়ার নেতা ও অন্য নির্বোধদের বলতে চাই- ভেবে তারপর কথা বলবে।’

তাঁর এই হুমকি এমনিতেই গ্যাস-সঙ্কট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে জর্জরিত ইউরোপের অনেকের মধ্যে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট অব এনার্জি স্টাডিজের কাৎজা ইয়াফিমাভা বলছেন, বেলারুশের প্রেসিডেন্টের হুমকিকে ‘হালকা করে দেখলে’ চলবে না। তিনি বলেন, ইইউ যদি বেলারুশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে হয়তো দেশটি হুমকিটি বাস্তবায়িতও করে ফেলতে পারে। তেমনটা হলে ইউরোপজুড়ে গ্যাসের দাম হু হু করে বেড়ে যাবে।

তবে ইইউর অর্থনীতি কমিশনার পাওলো গেন্টিলোনি বলেছেন, ২৭ দেশের জোটকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।
আর বেলারুশের নির্বাসিত বিরোধীদলীয় নেতা সভেৎলিনা তিখানোভস্কায়া বলেছেন, লুকাশেঙ্কো ‘ধাপ্পা দিচ্ছেন’, গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ক্ষমতা তাঁর নেই।

সীমান্ত সংকট ঘিরে সোমবারের মধ্যে বেলারুশের ওপর ইইউর নতুন নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এয়ারলাইনসও থাকতে পারে, যারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের।

এই পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার তার্কিশ এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের জন্য কোনো কোনো রুটে টিকিট বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে।
ইরাক জানিয়েছে, তারা বেলারুশ থেকে তাদের দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে আনতে ফ্লাইট পাঠাচ্ছে।
একই ইস্যুতে ইইউ রাশিয়ার এয়ারলাইনস এরোফ্লটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এরোফ্লট বেলারুশে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দিয়ে আসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।