ইউনেসকোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলনে ভাষণ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)কে রিমোট লার্নিং (দূর শিক্ষণ) ও অনলাইন শিক্ষাকে বৈশ্বিক জনসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, অনলাইন শিক্ষা কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন একটি ‘নতুন স্বাভাবিক’ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। খবর বাসসের।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ইউনেসকোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি ইউনেসকোকে সরকার, বেসরকারি খাত ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সম্পদের জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।

মহামারি কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে ক্ষুণ্ন করেছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বড় ত্রুটি প্রকাশ করেছে। অনলাইন শিক্ষা মহামারি চলাকালীন একটি নতুন স্বাভাবিক হিসেবে বিকশিত হয়েছিল। তবু এটি একটি নতুন বিভাজনও প্রকাশ করেছে।’ তিনি অবশ্য বলেন, ডিজিটালাইজেশন উন্নত পরিষেবা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ বাড়িয়েছে, তবে ক্ষতিকর বিষয়বস্তু এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ইউনেসকোর মতো বিশ্ব সংস্থাগুলোকে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা উচিত। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশের জন্যই একটি প্রাণঘাতী বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে আমরা উচ্চাভিলাষী জলবায়ু অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। আমরা ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বিদেশি বিনিয়োগের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছি এবং আমরা আশা করি, যে দেশগুলো বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বেশি দায়ী, তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইউনেসকোকে জলবায়ু শিক্ষার ওপর আরও বেশি জোর দেওয়ার এবং জলবায়ু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বৃহত্তর সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বাড়াতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা ইউনেসকোকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার মহান আত্মত্যাগকে চিহ্নিত করে ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী, আমরা শান্তির সংস্কৃতির ধারণাকে প্রচার করি-এমন একটি ধারণা, যা সহনশীলতা, সম্মান এবং সহানুভূতির মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং এটি মানবসমাজের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। বাংলাদেশে আমরা শিক্ষা নিয়ে একটি টার্গেটেড পন্থা তৈরি করেছি। সুনির্দিষ্ট নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় তালিকাভুক্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গসমতা এবং বালিকা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। অনুরূপভাবে আমরা ভবিষ্যৎ কর্মজগতের জন্য ব্যবহারিক প্রয়োজনকে মোকাবিলা করে বিশ্বাসভিত্তিক শিক্ষাকে আধুনিক করেছি। আমরা জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের জন্য মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করছি।’