আরএমপির নির্মাণাধীন সদর দপ্তরে রোববার আরএমপির কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উদ্বোধন করেন। ছবি: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ

সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণসহ ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণাদি সংগ্রহ করে দ্রুত পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে (আরএমপি) ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব যাত্রা শুরু করেছে। আরএমপির কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক আনুষ্ঠানিকভাবে এ ল্যাবের উদ্বোধন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ), ইউএস অ্যাম্বাসির সহযোগিতায় ল্যাবটি আরএমপির নির্মাণাধীন সদর দপ্তর (সিএন্ডবি মোড়)-এ সাইবার ক্রাইম ইউনিট ভবনে স্থাপন করা হয়েছে।

আজ রোববার বেলা আড়াইটায় আরএমপির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আরএমপির কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক।

পুলিশ কমিশনার বলেন, বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিত্য নতুন অপরাধ করছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানাকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ হচ্ছে। এসব অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি তদন্তে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করছে। আরএমপি ডিজিটাল ডিভাইস ও সাইবার সংক্রান্ত অপরাধ ও অপরাধীদের শনাক্তকরণসহ আলামতের সত্যতা নিরূপণের জন্য এত দিন সিআইডি ও পিবিআইয়ের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের সহায়তা নিত। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি টেররিজম অ্যাসিসট্যান্সের (এটিএ) সহযোগিতায় আরএমপিতে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

কমিশনার আরও বলেন, ইতোমধ্যে আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও ফরেনসিক সফটওয়্যার সংবলিত অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এখন থেকে আরএমপিতেই এই কাজগুলো করা হবে। এর ফলে অপরাধ শনাক্তকরণ সহজ হবে এবং কম সময়ে অধিক মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই ল্যাব স্থাপনের সহায়তা করায় তিনি ইউএস অ্যাম্বাসি-এবং এটিএ এর প্রশিক্ষকদের ধন্যাবাদ জানান।

সাইবার ক্রাইমের ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী, পিপিএম, বলেন, এই ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার ও ডিজিটাল স্টোরেজ মিডিয়া থেকে গোপনীয় ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করা যাবে। থাম্ব ড্রাইভ, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ এবং অন্য পদ্ধতিগুলোর মতো বৈদ্যুতিক ডিভাইস দিয়ে তথ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ডেটা সংরক্ষণ বা স্থানান্তর করা যাবে। অপরাধ ঢাকতে বা আলামত গায়েব করতে মুছে ফেলা তথ্য, সোআপ ফাইল, মেমোরি ডাম্প, হার্ড ড্রাইভে ফাঁকা ফোল্ডার, প্রিন্ট স্পুলার ফাইলের ফরেনসিক পরীক্ষা করবে আরএমপি’র ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। মোবাইল ফরেনসিকের মধ্যে রয়েছে অপরাধ কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও যে কোনো ডিভাইস। ফরেনসিকের মাধ্যমে মোবাইল ফোন, ট্যাব, জিপিএস, ডিভাইস, ড্রোন ইত্যাদি থেকে ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব ডেটা উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করবে তার মধ্যে রয়েছে-এসএমএস এবং এমএমএস বা এ-জাতীয় মুছে ফেলা ডেটা, কল লগ ও যোগাযোগের তালিকা, ফোন আইএমইআই ও ইএসএন সম্পর্কিত তথ্য, ওয়েব ব্রাউজিং, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটিংস, জিওলোকেশন তথ্য, ই-মেইল এবং ইন্টারনেট মিডিয়া ও ফর্ম, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পরিষেবা, পোস্টসহ বিভিন্ন ডার্ক ও ডিপ ওয়েব সাইটের হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের অপরাধের আলামত সমূহ। এই ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে অ্যাপ ডেটা, মেসেঞ্জার ডেটা ও ক্লাউড ড্রাইভে সংরক্ষিত ডেটাসমূহ এ্যানালাইসিস করে সকল অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য প্রমাণাদী সংগ্রহ করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো: ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক অ্যান্ড ডিবি) সামসুন নাহার, বিপিএম, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ) এর প্রশিক্ষকবৃন্দ-সহ আরএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।