হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী মুন্না। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের সার্জিক্যাল সরঞ্জাম ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী মুন্না হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে ৩ টায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত মো.কবির হোসেনকে (৫০) ঢাকার হাজারীবাগের ম্যাটাডোর মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

তার দেওয়া তথ্য অনুসারে পিবিআই মুন্না হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত ২ টি সিএনজি ( ঢাকা-দ-১১-১৮০১ এবং ঢাকা-দ-১১-২৪৩৮) উদ্ধার করে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভিকটিম ইয়াছিন আলী মুন্না তার গ্রামের বাড়ী বগুড়াতে যান এবং ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার সময় বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত আনুমানিক ১১টার সময় ভিকটিমের বড় বোন ভিকটিমের মোবাইল নম্বরে ফোন করে কোনও সাড়া পান না। পরবর্তীতে ২৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ২টার সময় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ ভিকটিম ইয়াছিন আলী মুন্নার মোবাইল ফোন থেকে ভিকটিমের বড় বোনের মোবাইলে জানান মুন্নার মৃতদেহ শেরেবাংলা নগর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল গেইটের থেকে ৩০ গজ উত্তরে রাস্তার পাশে থাকা ময়লার স্তূপের পাশে পাওয়া গেছে।

খবর পেয়ে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে ভিকটিমের বড় বোনের স্বামী একেএম আমানুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে শেরে বাংলানগর থানায় মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। প্রায় ২ মাস পর ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) মামলাটির তদন্ত শুরু করে। ডিবির তদন্তের সময়ে ২০২০ সালের ১২ জুলাই একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় আরেকটি মামলা হয়। মামলাটি শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ তদন্ত করে। মামলায় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আসামী মো. আসাদ শেখ (৫৩), মো. দেলোয়ার হোসেন হাওলদার ওরফে দেলু (৪০), মো. জলিল সিকদার (৪৩) এবং মো. মিজানুর রহমান সরদার ওরফে মিজানকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। ডিবি এ আসামিদের ব্যবসায়ী মুন্না হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। ডিবি প্রায় ১০ মাস তদন্তের পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের আদেশে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে গ্রেপ্তার ৪ জন আসামি পিবিআই মামলা গ্রহণের আগেই জামিন পান।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, আহসান হাবীব পলাশ, বিশেষ পুলিশ সুপার (এসআইএন্ডও) এবং মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসআইঅ্যান্ডও (অগার্নাইজড ক্রাইম-উত্তর) এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম গোয়েন্দা তথ্য, সিসি ফুটেজ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি কবির হোসেনকে হাজারীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আসামি কবির হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তদন্তকালে জানা যায় যে, ভিকটিম বগুড়া হতে ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছানোর পর তার বাসায় যাওয়ার জন্য রাত আনুমানিক ৯টার সময় এ মামলায় আগে গ্রেপ্তার আসামি ড্রাইভার আসাদ শেখের সিএনজিতে উঠেন। সিএনজি শ্যামলীতে পৌঁছানোর পর শ্যামলী ক্রসিং এর আগে বাম পাশে ফাঁকা জায়গাতে থামে । সিএনজি নষ্টের কথা বলে আসাদ শেখ ভিকটিমসহ অপেক্ষা করতে থাকেন। ইতোমধ্যে পিছনের সিএনজিতে থাকা আসামি মো. দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার ওরফে দেলু, মো. জলিল সিকদার এবং মো. মিজানুর রহমান সরদার ওরফে মিজান জোরপূর্বক আসামি ড্রাইভার আসাদ শেখের সিএনজিতে উঠেন । আসাদ শেখ সিএনজিটি চালিয়ে যেতে থাকেন। তখন পিছন থাকা সিএনজিটি আসামি কবির হোসেন (৫০) চালিয়ে পিছনে পিছনে যান। পরবর্তীতে সিএনজি দুটি বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে এ আসামিরা ঘটনাস্থলে একত্র হয়ে ভিকটিম ইয়াছিন আলী মুন্নাকে মারধর করেন । দেলোয়ার ও জলিল গলা ও মুখ চেপে ধরে টাকা-পয়সা, গলায় থাকা মোটা স্বর্ণের চেইনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন । তারপর তারা ভিকটিমকে এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি শেরেবাংলা নগর থানাধীন শেরেবাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল গেইটের অনুমান ৩০ গজ উত্তরে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান।

আসামী মো. আসাদ শেখ, মো. দেলোয়ার হোসেন হাওলদার ওরফে দেলু, মো. জলিল সিকদার এবং মো. মিজানুর রহমান সরদার ওরফে মিজান দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় সিএনজি দ্বারা ছিনতাই পরিচালনা করে আসছিলেন।
এ আসামিদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলায় তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন।

প্রকাশ থাকে যে, ইয়াছিন আলী মুন্নার বয়স ৬০ বছর, তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার সোনাতলা থানায়। ঢাকার মোহাম্মদপুরে তার সার্জিক্যাল সরঞ্জামের ব্যবসা ছিল। তিনি তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অপর একটি কক্ষে বসবাস করতেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।