পিবিআইয়ের হেফাজতে গ্রেপ্তার প্রতারক মো. হেলালউদ্দিন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

এক যুগের বেশি সময় অন্যজনের শিক্ষাগত সনদ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি এবং এরপর অর্থ আত্মসাৎ করে এক প্রতারকের উধাওয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)
ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই প্রতারককে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তানজিম প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৮) নামে এক ব্যক্তি তানজিম প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লি. কোম্পানিতে গত ০১/০৯/২০১৮ তারিখ থেকে ০৯/০৫/২০২১ তারিখ পর্যন্ত অফিসার (সেলস অ্যান্ড বিপণন) পদে কর্মরত ছিলেন।

ওই ব্যক্তি বাদীর প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্লাস্টিক সামগ্রী বিভিন্ন দোকান, অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বিক্রীত মালামালের বিপরীতে তাদের কাছ থেকে মোট ১৯ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করে নির্ধারিত অফিসে জমা না করে আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান।

পরে এই মামলার বাদী বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও ওই আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন এবং তাঁর কোম্পানির পণ্যের বিক্রীত মালামালের টাকা উদ্ধার করতে পারেননি।

বাদীর এই এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা দায়ের করে এসআই (নিরস্ত্র) মো. শফিউল আলম-২ এর ওপর তদন্তভার অর্পণ করেন। তিনি মামলার তদন্ত শেষে ১ নম্বর আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমের নাম ঠিকানা সঠিক না পেয়ে তাঁকে অব্যাহতির আবেদনসহ এ মামলার অপর আসামি মো. মহিউদ্দিনের (৩৯) বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাদী এ তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন। আদালত বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআই, ঢাকা মেট্রো (উত্তর)কে নির্দেশ দেন।

পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা এর নিবিড় তদারকিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাহমুদুল হাসান এ মামলার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।

তদন্তে তিনি জানতে পারেন, আসামি মো. হেলাল উদ্দিন (৩৫) নিজের প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে জনৈক মো. জাহাঙ্গীর আলমের শিক্ষাগত সনদ, জন্মসনদ এবং বায়োডাটায় তাঁর নিজের ছবি সংযুক্তির মাধ্যমে তানজিম প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের অফিসার (সেলস অ্যান্ড বিপণন) পদে যোগদানের জন্য আবেদন করেন এবং গত ০১/০৯/২০১৮ তারিখে তিনি ওই পদে নিয়োগ পান। তিনি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলমের নাম ধারণ করেই কাজ করে আসছিলেন। চাকরি করার সময় মো. হেলাল উদ্দিন বাদীর প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্লাস্টিক সামগ্রী বিভিন্ন দোকান, অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বিক্রীত মালামালের বিপরীতে তাদের কাছ থেকে মোট ১৯ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করে নির্ধারিত অফিসে জমা না করে আত্মসাৎ করেন।

পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুল হাসান সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে আসামি মো. হেলাল উদ্দিনকে ৭ জুন রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তার করেন।

পিবিআইয়ের তদন্তে প্রকাশ পায়, আসামি মো. হেলাল উদ্দিন অপরের শিক্ষাগত সনদ, জন্মসনদ এবং বায়োডাটায় নিজের ছবি সংযুক্ত করে এক যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে আসছিলেন। যাঁর কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁর নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি হেলাল উদ্দিনের স্কুলজীবনের সহপাঠী ছিলেন। তিনি বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশনে চর মোতাহার আলিম মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি করছেন। পাশাপাশি এলাকায় বসবাস করার সুবাদে কৌশলে হেলাল উদ্দিন তাঁর বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমের অজ্ঞাতে তাঁর সনদগুলো সংগ্রহ করে রাখেন। পরে এসব কাগজপত্র দিয়ে প্রথমে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লি. কোম্পানিতে এবং পরে তানজিম প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লি. কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

আসামি হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকরি করে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগসংক্রান্ত সত্যতা পাওয়া গেছে।