বক্তব্য দিচ্ছেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: পুলিশ নিউজ

‘এসো বই পড়ি, পুরস্কার জিতি’ স্লোগানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এবং ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন।
বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আলোচক ছিলেন। তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করে যাচ্ছেন, তা জানতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সামনে মিথ্যায় ভরা তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাস নিজের গতিতে চলে। কারা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক ছিল, কারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, নতুন প্রজন্ম এসব বিষয় জেনে নিজেদের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে, তাঁর ত্যাগের কথা জানতে হবে, দেশের জন্য, মানুষের জন্য ভালোবাসার কথা জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেছেন। যাঁরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আজ তারা এখানে উপস্থিত। তোমাদের জানতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে কোন পর্যায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য হাজার বছর ধরে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানের ক্ষত নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের ক্ষত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা। তিনি আমাদেরকে স্বল্প সময়ে একটি পতাকা, একটি দেশ, একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: পুলিশ নিউজ

আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ এবং আত্মমর্যাদাশীল জাতির জন্য লড়াই করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ আমরা দারিদ্র্য জয়ের দ্বারপ্রান্তে। আজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, এসডিজি অর্জন এমন কোনো সামাজিক দিক নেই; যেখানে আমরা আলোচিত হচ্ছি না। এটা সম্ভব হয়েছে; কারণ, বঙ্গবন্ধু দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে যত বেশি চর্চা করবে, আমাদের পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম তত বেশি সুদৃঢ় হবে। আর যত বেশি পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম সুদৃঢ় হবে, দেশ তত এগিয়ে যাবে।

আইজিপি বলেন, পরিবর্তনের জন্য বেশি মানুষের প্রয়োজন হয় না। যে ১০ হাজার শিক্ষার্থী কুইজে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মধ্য থেকে ১০ জন বের হয়ে এলেই দেশ বদলাতে পারবে।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতি গঠনের জন্য মানুষকে তৈরি করেছেন, ধাপে ধাপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এ প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এখন পড়ার অভ্যাস কমে গেছে। পড়তে হবে প্রশান্তির জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পড়তে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ আজ মর্যাদার আসনে রয়েছে। জনগণের সম্মানের জায়গাটা তারা অর্জন করতে পেরেছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর বই পড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরীক্ষার্থী হওয়ার জন্য পড়া নয়, পড়া হোক শিক্ষার্থী হওয়ার জন্য।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার বিজয়ী কয়েকজন। ছবি: পুলিশ নিউজ

বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ১০০-তে ১০০ নম্বর পেয়েছে ৪৩৯ জন। তাদের প্রত্যেককেই পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ জন এবং একাদশ থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে ১০ জনকে নির্বাচিত করা হয়।

পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শেখ মো. তাসনিম ফাহিম রহমান এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোসাম্মৎ তানিয়া খাতুন বক্তব্য দেন। পরে প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিরা বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।