পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার পক্ষ থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী আনিছুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয় উপহারের কম্পিউটার ও চাকরির নিয়োগপত্র। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। চলতে হয় ক্রাচে ভর দিয়ে। বোনও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঘরে অসুস্থ মা। বাবার ঝালমুড়ি বিক্রিতে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসার। এরপরও দমে যাননি মো. আনিছুর রহমান। মাস্টার্স শেষ করেছেন। কিন্তু একটা চাকরি যেন সোনার হরিণের চেয়েও দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। অবশেষে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা। চাকরি হয়েছে আনিছুরের।

আনিছুর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের ছিদ্দিক হোসাইনের ছেলে। ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সহায়-সম্পদ নেই পরিবারটির। স্থানীয় সূত্র জানায়, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আনিছুর লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। দর্শন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি মাস্টার্স শেষ করেছেন।

আনিছুর জানান, মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন, কিন্তু সাড়া পাননি। সপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে নিজের কষ্টের কথা জানিয়ে একটি পোস্ট দেন তিনি। কম্পিউটার জানেন উল্লেখ করে ওই পোস্টে তিনি একটা চাকরির জন্য সবার সহযোগিতা প্রার্থনা করেন। পোস্টটি নজরে আসে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার। তিনি প্রতিবন্ধী আনিছুরকে সহযোগিতার জন্য উদ্যোগ নেন।

আনিছুর এখন আর বেকার নন। পুনাক সভানেত্রীর উদ্যোগে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার পক্ষ থেকে আনিছুরকে একটি কম্পিউটার উপহার এবং চাকরির নিয়োগপত্র হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার, জেলা পুনাক সভানেত্রী, কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির আহ্বায়কসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা।

আনিছুর রহমানের হাতে পুনাক সভানেত্রীর উপহার ও চাকরির নিয়োগপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠান। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত আনিছুর রহমান বলেন, ‘দুই বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছি দিনের পর দিন। একটি চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’ চাকরি ও কম্পিউটারের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তিনি পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।