পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে আবেদন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড করেছিল, তাতে সায় দেয়নি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আর বিদ্যুতের দাম বাড়ার সম্ভাবনায় উদ্বেগের মধ্যে বৃহস্পতিবার দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির এই খবর আসে।
কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদুতের বাল্ক মূল্যহার পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আগের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নিজেদের ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে সেই আবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও তথ্যের ঘাটতি তুলে ধরে তা ফেরত পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।

দ্বিতীয় দফায় আবারও আবেদন করে পিডিবি। সেই আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি হয়।

বিইআরসি গঠিত কারিগরি কমিটি সেখানে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু আরও কিছু তথ্য ও লিখিত মতামতের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পিডিবিকে সময় দেয় বিইআরসি।

সেই শুনানির ৯০ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানালেন, ‘তথ্যের অস্পষ্টতার কারণেই’ দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়েছেন।

‘শুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেই হিসাবে আজ ৯০ দিনের শেষ কর্মদিবস। আমরা পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার অপরিবর্তিত থাকবে বলে আদেশ দিয়েছি। এই ক্ষেত্রে পিডিবির ডেটা এম্বিগুইটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে এর কী প্রভাব পড়বে, তার একটা বিশ্লেষণ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেটাও ঠিকভাবে দেওয়া হয়নি।’

চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ‘ডেটা, অ্যানালাইসিস ও ডিসিশন- এই তিন ধাপে এগোতে হয়।

‘ডেটা থেকে অ্যানালাইসিস করে থাকি। আমরা বলেছি ডেটা এম্বিগুইটিস। কত ধরনের এম্বিগুইটিস, সেটা বলিনি। সব মিলিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করতে গিয়ে যথাযথ বিশ্লেষণ করা যায়নি। অস্পষ্টতা রেখে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি ভয়াবহ হবে। আমরা প্যারালাইসিস অব অ্যানালাইসিস ট্রমায় ভুগছি।’

গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এমনিতেই সঙ্কটে আছে সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্কটের কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় লোডশেডিংয়ে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং উদ্যোক্তাদের।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান মঙ্গলবার এক সভায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন।

পরে বিইআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানাবে কমিশন। এ দফা দাম কতটা বাড়তে পারে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে খবরও প্রকাশ করে কোনে কোনো সংবাদমাধ্যম।

ফলে কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে দাম বাড়ার সিদ্ধান্ত আসছে বলেই সবাই ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু বিইআরসি আগের দাম বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে স্বস্তির কথা বলেন সাংবাদিকেরাও।