পরিবেশবান্ধব কাগজের বলপেন উদ্ভাবক যশোরের নাসিমা আক্তার। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

দুই ছেলে-মেয়ে আর প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই জীবনসংগ্রামের মধ্যেই পরিবেশদূষণ তাঁকে ভাবায়। আর তাই সাংসারিক কাজের ফাঁকে তিনি উদ্ভাবন করেছেন পরিবেশবান্ধব কাগজের বলপেন। নিজের এই উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই স্বাবলম্বী হতে চান, সংসারে আনতে চান সচ্ছলতা। তিনি যশোরের কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকার লোন অফিস পাড়ার বাসিন্দা নাসিমা আক্তার।

নাসিমা জানান, ছোটবেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি পরিবেশবান্ধব এই বলপেন উদ্ভাবন করেছেন। বলপেনটি তৈরি করতে তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ধরনের রঙিন কাগজ, আঠা ও রিফিল (শিস)। এই কাজে প্রথমে তাঁকে সাহায্য করেছে তাঁর ছেলে। পরে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও ৪-৫ জন অসহায় নারী। নাসিমার অদম্য ইচ্ছা, একদিন তিনি কারখানা খুলবেন, তাঁর মতো অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁর এই স্বপ্নের পেছনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থসংকট।

নাসিমার উদ্ভাবিত পরিবেশবান্ধব বলপেন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, নাসিমা আক্তার একপর্যায়ে জানতে পারেন, যশোরের বর্তমান পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার), পিপিএম অত্যন্ত মানবিক একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি যশোর জেলায় যোগদানের শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতিসহ বিভিন্ন প্রকার মানবিক কাজ করছেন। নিজের স্বপ্নপূরণের আশায় একদিন নাসিমা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান। পুলিশ সুপার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নাসিমার কথা শোনেন, তাঁর কাছ থেকে পাঁচ টাকা মূল্যের ১ হাজারটি বলপেন ১০ হাজার টাকায় কিনে নেন। একই সঙ্গে তিনি নাসিমার পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরবর্তীকালে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার মানবিক দিক বিবেচনায় এবং পরিবেশবান্ধব কলমটির গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ প্রচারের ব্যবস্থা করতে পুলিশ মিডিয়া সেলের ইনচার্জকে নির্দেশনা দেন।

নাসিমার উদ্ভাবিত হরেক রং ও ডিজাইনের বলপেন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ
পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, অনেকেই আর্থিক অনটনে পড়ে বিভিন্ন প্রকার অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নাসিমা সে পথে হাঁটেননি। তিনি নিজের ও পরিবেশের কথা ভেবেছেন। সেই চিন্তা থেকে উদ্ভাবন করেছেন পরিবেশবান্ধব কলম। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আসুন, নাসিমার মতো উদ্ভাবকদের পাশে দাঁড়াই। আমাদের একটু সহযোগিতায় তাঁর মতো অনেক উদ্ভাবক স্বাবলম্বী হতে পারবেন।’