বক্তব্য দিচ্ছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম বলেছেন, থানাকে জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। থানার দরজা কখনো বন্ধ হয় না, ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। থানায় আগত মানুষের কথা সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে হবে। পুলিশের প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি আরও বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দের একাংশ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

রোববার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইজিপি।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আইজিপি বলেন, পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। আমরা কাজ করছি বলেই আমাদের কাছে জনগণের আশার মাত্রা আকাশচুম্বী হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আমাদেরকে সচেষ্টা থাকতে হবে।

আইজিপির হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার)। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্য স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলেই আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ অন্যান্য অপরাধ দৃঢ় হস্তে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না, এ জন্য আরও কাজ করতে হবে। আমরা জনগণের যে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি, তা ধরে রাখতে হবে।

করোনাকালে মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের সময় পুলিশের অনন্যসাধারণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, করোনায় কেউ মারা গেলে আত্মীয়স্বজন এমনকি মা-বাবাও সন্তানের লাশ ফেলে চলে গিয়েছিলেন; তখন পুলিশ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ নিজের জীবনকে তুচ্ছ গণ্য করে, নিজের জীবন উৎসর্গ করে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য পুলিশ মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছে, ভালবাসা পেয়েছে। মানুষের এ শ্রদ্ধা-ভালবাসা ধরে রাখতে হবে, মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে হবে।

বক্তব্য দিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সেবার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ৯৯৯-এ প্রতিদিন প্রচুর কল আসে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ আমাদের সেবা পেয়ে থাকেন। ৯৯৯ জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ধরনের একটি সার্ভিস পুলিশকে দেওয়ার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

আইজিপি আরও বলেন, পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বলেই বর্তমানে দেশে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা পার্শ্ববর্তী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে অনেক সামাজিক সূচকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছি।

আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাঁর প্রতি আস্থা রেখে তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের মতো একটি পেশাদার বাহিনীর প্রধান করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

আইজিপি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব শহীদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যসহ সব বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিও শ্রদ্ধা জানান আইজিপি।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে রাজারবাগের বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সামান্য ’থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল দিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাঁদের একটাই লক্ষ্য ছিল, দেশকে স্বাধীন করতে হবে।

আইজিপির বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইজিপি মহোদয় স্বচ্ছ ইমেজের একজন মানুষ। এমন একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি করায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ডিএমপির প্রতিটি সদস্য ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।

আইজিপিকে চৌকস, পেশাদার ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পুলিশ অফিসার আখ্যা দিয়ে ডিএমপির কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ বক্তব্য দেন।

এর আগে মোটরকেড ও সুসজ্জিত অশ্বারোহী দলে পরিবেষ্টিত হয়ে আইজিপি সংবর্ধনাস্থলে এসে পৌঁছান। একটি চৌকস পুলিশ দল তাঁকে গার্ড অব অনার দেয়। এ সময় ডিএমপি কমিশনার ফুল দিয়ে আইজিপিকে অভ্যর্থনা জানান।