পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার চার ডাকাত। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ডিবি পরিচয় দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে আসা প্রবাসীদের গাড়ি তল্লাশির নামে হাইওয়েতে ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। চার ডাকাতকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি লুন্ঠিত স্বর্ণ ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করেছে।

একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের বহনকারী প্রাইভেট কারের পথরোধ করে জোরপূর্বক তাঁদের কাছে থাকা বিদেশি মুদ্রা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন প্রকার মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতেরা মূলত ঢাকা থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন জেলা যেমন- ময়মনসিংহ, বরিশাল, বাগেরহাটগামী বিদেশফেরত যাত্রীদের গাড়ি টার্গেট করত। তারা টার্গেট করা গাড়িকে অনুসরণ করে ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফাঁকা জায়গায় পেছন থেকে এনে গাড়িকে চাপ দিয়ে থামিয়ে দেয় এবং তাদেরকে ডিবি পরিচয় দিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের কাছে অবৈধ মালামাল আছে বলে তল্লাশির কথা বলে জোরপূর্বক মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২ নভেম্বর ভোর আনুমানিক ৪টার সময় ফরিদপুর জেলার দেলোয়ার মাতব্বর তাঁর মালয়েশিয়াফেরত ছেলেকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে ফরিদপুরে নিয়ে আসার সময় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রাজেন্দ্রপুর ফ্লাইওভারের ওপরে পথরোধ করে ডাকাত চক্র ডাকাতি করে। একই ডাকাত দল গত ৫ মার্চ রাত ১টার সময় ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রাজেন্দ্রপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ফরিদপুরগামী একটি গাড়িতে ডাকাতি করে।

জনৈক মামুন মিয়া সৌদিফেরত তাঁর বোন, ভাগিনাদের নিয়ে ফরিদপুর যাওয়ার পথে ডাকাতেরা তাঁদের গাড়ি থামিয়ে ডিবি পরিচয় দিয়ে পথরোধ করে তাঁদের কাছে থাকা বিভিন্ন প্রকার বিদেশি স্বর্ণালংকার ও মালামাল ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।

এই দুটি ডাকাতির ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি ডাকাতির মামলা হয়।

চাঞ্চল্যকর উল্লিখিত দুটি ডাকাতির ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য ঢাকার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, পিপিএম (বার) তাৎক্ষণিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলামের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এবং শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ সার্কেলের নেতৃত্বে একটি স্পেশাল তদন্ত টিম দুর্ধর্ষ এই ক্লু-লেস ডাকাতির মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ব্যাপক তদন্ত শুরু করে।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহজনক মোবাইল ফোন যাচাই-বাছাই করে সন্দেহভাজন আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসামিরা তাদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো বন্ধ করে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে গেছেন। এ অবস্থায় ডাকাতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএমের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি চৌকস টিম ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে উল্লিখিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ডাকাত সর্দার সুমন মিয়াকে (২৫) ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে, মোস্তফাকে (৩২) ত্রিশাল থেকে, মো. আলামিনকে (২৫) ঢাকার রামপুরা থেকে এবং শারমিন আক্তারকে (৩৩) বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং তাঁদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই সক্রিয় ডাকাত দলের সদস্য।