কেরানীগঞ্জে পুলিশের অভিযানে সন্ধান পাওয়া হেরোইনের কারখানা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ঢাকার কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে হেরোইন কারখানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এ সময় ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হেরোইনের আনুমানিক দাম ২ কোটি টাকা। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ঘাটারচর এলাকায় ২২ আগস্ট (মঙ্গলবার) অভিযানটি পরিচালিত হয়।

গ্রেপ্তার আসামিদের নাম মো. হেলাল (৪৫), বিপ্লব (২২), মো. বিল্লাল (২২), মো. শরিফুল ইসলাম (২০), মোহাম্মদ আলী (২৬) ও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রানা (৩০)।

হেরোইন কারখানা থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে দুজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে ২ কেজি ১০০ গ্রাম হেরোইন, হেরোইন প্রস্তুতে কম্পোজিশন ব্লেন্ডিং করার জন্য ব্লেন্ডিং মেশিন, ইলেকট্রিক প্যাকিং মেশিন, ওজন মাপার ডিজিটাল মেশিন, হেরোইনের বিভিন্ন উপাদান, হেরোইন প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত আটা-ময়দা, হলুদ ও মরিচের গুঁড়ার ১ হাজার খালি প্যাকেট এবং ৯৮ বান্ডিল ফয়েল পেপার উদ্ধার করা হয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ জানায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ মাদক উদ্ধারে কাজ করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার আঁটিবাজার এলাকা থেকে মো. আলী ও মো. হাবিবুল ইসলাম রানা নামের দুই ব্যক্তিকে সন্দেহ হওয়ায় তল্লাশি করা হয়। তাঁদের হাতে থাকা দুটি সন্দেহজনক আটার প্যাকেট তল্লাশি করে সেখান থেকে পৃথকভাবে ৫০০ পুরিয়া করে মোট ১ হাজার পুরিয়া হেরোইন পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে দুটি আলাদা কারখানায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করার পর এভাবে প্যাকেটিং করে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়। কারখানা থেকে হেরোইন কখনো মসলার প্যাকেটে, কখনো আটার প্যাকেটে বাজারজাত করা হয়।

হেরোইন কারখানায় অভিযানের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশ আরও জানায়, ওই তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশের একটি দল আরশিনগরের লেক সিটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসডি মহলের চতুর্থ তলায় একটি হেরোইন তৈরি, প্যাকেজিং ও বাজারজাতকারী কারখানার সন্ধান পায়। কারখানা থেকে হেরোইনের পাশাপাশি ফয়েল পেপারের ৯৮টি বান্ডিল পাওয়া যায়। এসব ফয়েল পেপারে পুরিয়া বানিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়ার প্যাকেটে ভরে ইলেকট্রিক মেশিনে মুখ আটকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অভিনব কায়দায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কারখানা থেকে ১ হাজারটি খালি প্যাকেটও পাওয়া যায়।
হেরোইন কারখানা থেকে উদ্ধার বিভিন্ন সরঞ্জামের একাংশ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ওই কারখানা থেকে হেরোইন প্রস্তুত ও প্যাকেজিংয়ের সঙ্গে জড়িত হেলাল ও বিপ্লবকে প্রায় ১ কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া কারখানা থেকে হেরোইন প্রস্তুতের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রেপ্তার হেলাল ও বিপ্লবের তথ্যের ভিত্তিতে আঁটিবাজারে সুজন হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডের সি ব্লকে একটি বাসার নিচতলায় আরেকটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখান থেকে প্রায় ১ কেজি হেরোইনসহ বিল্লাল ও শরিফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই কারখানা থেকেও হেরোইন প্রস্তুতের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ছয় আসামির চারজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কেরানীগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে অভিনব কায়দায় হেরোইন প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন আটা-ময়দা ও মসলার প্যাকেটে করে ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল।