কিশোরগঞ্জে সোহান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মূল আসামি। ছবি: কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ

গত ২০ মার্চ বিকেলে সোহান আহাম্মেদ আলিফ (২৩) দুপুরের খাবার খেয়ে একটি দর্জির দোকানে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তাঁর মা হাওয়া আক্তার সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজা-খুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে গত ২৮ মার্চ কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য ভিকটিমের বাড়ি, আশেপাশের এলাকা, পার্শ্ববর্তী গ্রামসহ সম্ভাব্য সব স্থানে অনুসন্ধান করেন। উলুহাটি গ্ৰামের গাউসুল আযম গোরস্থানের জন্য বরাদ্দকৃত জমির নির্জন স্থানে উপস্থিত হলে গর্ত থেকে পা সদৃশ গলিত বস্তু দৃশ্যমান হওয়ায় ও হঠাৎ দুর্গন্ধ পেলে তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আল আমিন হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, মনতোষ বিশ্বাস ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওই স্থানে হাজির হয়ে এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে পচাঁ-অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন। প্যান্ট ও বেল্ট দেখে হাওয়া আক্তার প্রাথমিকভাবে তাঁর ছেলে বলে সনাক্ত করেন।

তদন্তকারী কর্মকতা লাশটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতাল পাঠান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ নিহতের মা বাদী হয়ে সন্দেহভাজন পাচঁজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন।

পুলিশ সুপার, কিশোরগঞ্জের সার্বিক তদারকি ও তত্ত্বাবধানে মামলা দায়েরের পর পরই মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শ্যামল মিয়া এজাহারনামীয় আসামি আনন্দ (১৭) ও হুমায়ুন কবিরকে (২৮) গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। এই মামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্তকারী কর্মকর্তা আরেক আসামি মাসুদকে রোববার সকালে মহিনন্দ ইউপির ভাস্করখিলা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেন।

এরপর মাসুদের দেখানো মতে হত্যার পূর্বে সেবন করানো ঘুমের ট্যাবলেটের খালি পাতা, কাশির সিরাপের খালি বোতল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও লাশ গুম করার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত দুটি কোদাল জব্দ করা হয়। মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তিনি তার ভাগনেকে উপহার দেওয়ার জন্য কেনা রূপার বিছা চুরির সন্দেহে সোহানকে ডেকে আনেন এবং সহযোগীদের নিয়ে রাতের আঁধারে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মৃতদেহটি মাটি চাপা দেন। রোববার বিকেলে মাসুদ বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।