মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে চাই যে আমাদের সকল ধর্মের মানুষ নিজেদের সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এ দেশের মাটিতে সকলের সমান অধিকার। আমারও যতটুকু অধিকার, আপনাদের তো ততটুকু অধিকার রয়েছে।’ খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও চট্টগ্রামের জে এম সেন হলের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে বলব, আপনারা এ দেশের মানুষ। নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে আপনারা মনে করবেন, আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। তাই সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরাও সেইভাবে আপনাদেরকে দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘কখনো নিজেদের মনে কোনো হীনম্মন্যতা নিয়ে আসবেন না। কারণ, আপনারা যারা এ দেশের নাগরিক, তারা সবাই দেশের মালিক এবং নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার রয়েছে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি চলতে পারেন, তাহলে আর দুষ্ট লোকেরা কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর দুষ্ট লোক সব ধর্মেই রয়েছে। কাজেই এই ঐক্য ও বিশ্বাসটা সকলের মধ্যে থাকতে হবে এবং সেটা নিয়েই আপনারা চলবেন, সেটাই আমি চাই।

করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেমন ইংল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশে উঠে গেছে। প্রতিটি দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের যেসব জিনিস আমদানি করতে হয়, তার দামও যেমন বেড়েছে, তেমনি পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই আমাদের কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি জানি, আমরা তেলের দাম বাড়ানোর পর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। তবে স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে সেটা নয়, কেউ আবার অধিক মুনাফার জন্য অতিরঞ্জিত করছে। তাই আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছি এবং খোঁজখবর নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা ব্যবস্থাও নেব।

এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কেনার এবং প্রায় এক কোটি লোককে বিশেষ পারিবারিক কার্ডের আওতায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ করে দেওয়ার তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এ জন্য তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং দ্রব্যমূল্য যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপই তাঁর সরকার নেবে এবং নিচ্ছে।

সমাজের বিত্তবানদের দুস্থ জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি ধর্মের কথাই চিন্তা করি, প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু মানবতার কথা বলে গেছে। প্রত্যেক ধর্মই অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে গেছে। শান্তির ও প্রগতির কথা বলেছে, মানুষের ক্ষতি করার কথা বলেনি, শ্রীকৃষ্ণও সে কথাই বলে গেছেন। আর এ দেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার, সেভাবেই আমরা উৎসব উদযাপন করব।