দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিআইডি

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্থল ও জলপথে যোগাযোগ ওর পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রথম দিন দিল্লিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন বিকেলে আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে তাঁদের ওই সাক্ষাতের পর এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আলোচনার বিষয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

আঞ্চলিক যোগাযোগের ওপর সফরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ভারতের যে সমস্ত চাওয়া রয়েছে বাংলাদেশের কাছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পেন্ডিং ইস্যুগুলো আছে, সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতসহ ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশ—সব মিলিয়ে এই পুরো অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের জন্য যে সমস্ত প্রজেক্ট হতে পারে, সেগুলো নিয়ে আমাদের প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। বেশ কিছু প্রজেক্ট দেরি হচ্ছে, আমরা জানি। যেমন বিবিআইএন একটা; এবং আমাদের পোর্ট ভুটান ও নেপালের ব্যবহার করার বিষয় আছে।’

সোমবার চার দিনের সফরে ভারতে গেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক বিষয় এবং অনিষ্পন্ন অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে; সই হতে পারে বেশ কয়েকটি চুক্তি।

দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনায় বরণ করার পর বিকেলে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে দুদেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও এমওইউ সই হওয়ার কথা রয়েছে।

‘ফিজিক্যাল কানেক্টিভিটির’ পাশাপাশি জ্বালানি সংযোগ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়েও হাসিনা ও জয়শঙ্করের বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি বলেন, ‘গ্রিড কানেক্টিভিটি…যার মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারি। এবং একইভাবে নেপাল, ভুটানের থেকে বিদ্যুৎ এবং ভারতেরও এক অংশ থেকে আরেক অংশে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার যে ব্যাপার আছে, সেগুলোর ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তাঁর সাথে সহমত হয়েছেন।’

আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে রাখাইনে যে অস্থিরতা আমরা দেখছি, এটা কোনোভাবে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না, এটা সবার মনে একটা শঙ্কা আছে। উনারা আমাদেরকে বলেছেন যে, ভারতও লক্ষ করছে যে এখানে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। তো, এটা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়।’

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যে ক্রাইসিস, তাতে করে যে সমগ্র বিশ্বে অর্থনীতির ওপরে বা বিভিন্নভাবে যে একটা বিরূপ প্রভাব এসেছে, সবাই এটার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আমরা কীভাবে আমাদের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করতে পারি, যাতে এই যে সংকট মোকাবিলায় আমরা আরও একসাথে কাজ করতে পারি, সে বিষয়েও কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।’

কৌশলগত পণ্য রপ্তানির বেলায় ভারতের নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যাতে আগেভাগে জানতে পারবে, সেই ব্যবস্থা সরকার চাইছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্ট্র্যাটেজিক কমোডিটিজ যেগুলো আমরা ভারত থেকে নিই, সেগুলোর ব্যাপারে যাতে করে কোনো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারত যেন আমাদেরকে ইনফর্ম করে।’

‘পাশাপাশি জ্বালানি-বাণিজ্যের যে বিষয়টি আছে, ভারতসহ নেপাল ও ভুটান, এগুলোর মধ্যে কীভাবে…অলরেডি এক হাজার মেগাওয়াট আসছে, সুতরাং এটার সুবিধাগুলো আমরা ভোগ করছি।’

ভারতের উদ্বৃত্ত তেল যাতে কেনা যায়, সেই ব্যবস্থা বাংলাদেশ এই সফরে চাইবে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যে ক্রাইসিসটা যাচ্ছে, সেখানে ডিজেল থেকে আরম্ভ করে পেট্রল বা অন্যান্য প্রডাক্টস, গ্যাস—এটা প্রকিউর করার ক্ষেত্রে অনেক দেশই সমস্যায় পড়ছে।’

‘ওইটা নিয়েও আলাপ করা হবে যে, যাতে করে তাদের যদি উদ্বৃত্ত থাকে, এটা কীভাবে আমরা মিউচুয়ালি এগ্রিড টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন্সের মাধ্যমে যদি আমরা অ্যাসিউরড সাপ্লাই করতে পারি বা আমাদের ডিমান্ডটা মিট করতে পারি, তাহলে সেটাও বর্তমান যে সংকটটা যাচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া ক্রাইসিসের কারণে; সেটা আমরা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আমরা আশা রাখি।’

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে কিনতে পারা যাবে না, এটা ঠিক না। কিন্তু রাশিয়ার টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন্স সেগুলো আমরা এখন যাচাই-বাছাই করছি। তা ছাড়া কোনো মিডিয়াম অব ট্রানজেকশনের মাধ্যমে এই ট্রানজেকশনটা সেটেলড হবে এখানে একটু ইয়ে আছে…’

‘ভারতের কাছে যদি তাদের উদ্বৃত্ত থাকে, সেটা যেকোনো সময়ে যদি আমাদের ফেভারেবল টার্মসে আমরা পাই, তাহলে আমরা অবশ্যই সেটা কনসিডার করব।’

পানিবন্টনের ইস্যুগুলোর কীভাবে আরও অগ্রগতি করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘মূল আলোচনা আগামীকাল হবে। আজকে জাস্ট এগুলো ফ্ল্যাগ করার মতো।’

তিস্তা নিয়ে আলোচনা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় তো সবকিছু থাকবে। গঙ্গাও থাকতে পারে, যেহেতু মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে সামনে আরও আলোচনা করার অবকাশ আছে।’