রাজশাহী পুলিশ লাইনস বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমরে আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথার ক্ষণ উদযাপন করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশসহ রাজশাহীর বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিট।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী পুলিশের গৌরবময় এই দিনটিকে স্মরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন আরএমপির কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, বিপিএম।

এ উপলক্ষে ২৮ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আরএমপ’র কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, বিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মীর রেজাউল আলম, বিপিএম (বার), প্রিন্সিপাল (অ্যাডিশনাল আইজিপি), বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা, রাজশাহী, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) ও রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান, পিপিএম। অনুষ্ঠান শেষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহীর বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রাজশাহী পুলিশ লাইনস বধ্যভূমিতে শহীদ বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে তাঁরা শহীদ পুলিশ সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনসহ দোয়া করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জাগরণীমূলক গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মো. রশীদুল হাসান, পিপিএম মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী পুলিশের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় তাঁর বর্ণনায় উপস্থিতবর্গ ফিরে যান ‘৭১ এর সেই ক্ষণে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মহান মক্তিযুদ্ধে পুলিশের রয়েছে আত্মত্যাগের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস। ২০১১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজারবাগের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম প্রতিরোধের কথা আমাদের সকলেরই জানা। এ ছাড়া রাজশাহীসহ আরও কিছু জেলায় পুলিশের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা আলোচনায় তেমন একটা আসে না। রাজশাহী পুলিশের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথার ক্ষণ উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহণ করায় আরএমপির কমিশনারকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি পুলিশ কমিশনার বলেন, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বেলা ১১টায় বা মধ্যাহ্ণে এই পুলিশ লাইনস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল। ওই সময় আমাদের সাহসী বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধারা অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা নিজের প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। এই বধ্যভূমিতে তাঁরা শায়িত আছেন। আমরা সেই বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের ক্ষণ উদযাপন করতে সমবেত হয়েছি। যাদের বীরত্বগাথায় আমরা গৌরবান্বিত তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস তুলে ধরতে এই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন শেখ ভুলু, শহীদ পরিবারের সন্তান আব্দুল মাসুদ, কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজশাহী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার), অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশনস্) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, কমাডেন্ট (অতিরিক্ত ডিআইজি), আরআরএফ, রাজশাহী দীন মোহাম্মদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলামসহ রাজশাহী জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারগণ, রাজশাহীস্থ বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণসহ রাজশাহীস্থ সকল পুলিশ ইউনিটের সদস্যবৃন্দ।