টাইব্রেকারে জয়ের নায়ক মার্তিনেজকে এভাবেই বুকে জড়িয়ে নেন আর্জেন্টিনার এক স্টাফ। ছবি: সংগৃহীত

এমিলিয়ানো মার্তিনেজের ডানায় চড়ে আরেকবার রক্ষা পেল আর্জেন্টিনা। তাঁর জাদুতে এবার রোমাঞ্চকর জয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। শুক্রবার সকালে হিউস্টনে ইকুয়েডরকে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। নিয়ম অনুযায়ী, কোপায় ফাইনাল ছাড়া নকআউট পর্বে নেই অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। সরাসরি টাইব্রেকারে যাওয়া ম্যাচে আরেকবার জাদু দেখালেন এমি। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা লিওনেল মেসিই আসেন প্রথম শট নিতে। সোজাসুজি কিক নিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ইকুয়েডরের গোলরক্ষক আলেক্সান্দার ডমিঙ্গোজ ঝাঁপ দিয়েছিলেন বাম পাশে। কিন্তু মেসির শট গোলপোস্টে লেগে বল চলে যায় ওপর দিয়ে।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপে এমির নৈপুণ্যে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে টাইব্রেকারে ‘মনস্তাত্ত্বিক গেম’ খেলে হারিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সকে। তেমনটা দেখালেন ইকুয়েডরের বিপক্ষেও। প্রতিপক্ষের প্রথম দুই শটই দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন এমি। এরপরই প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে ভেঙে দেওয়া তাঁর সেই পরিচিত শারীরিক অঙ্গভঙ্গি। মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার আর কেউ টাইব্রেকারে গোল মিস করেননি। হুলিয়ান আলভারেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গঞ্জালো মন্তিয়েল ও নিকোলাস ওতামেন্দি—সবাই পেনাল্টি শুটআউটে সফল হয়েছেন।

টাইব্রেকারে ইকুয়েডরের প্রথম দুই শটে গোল করতে ব্যর্থ হন অ্যাঞ্জেল মেনা ও অ্যালান মিন্ডার। আর শেষ দুই শটে সফল হন জন ইয়েবোহা ও জর্ডি কাইসেদো। ওতামেন্দি পেনাল্টি শুটআউটে শেষ গোলটি করতেই শেষ চারে যাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠেন আর্জেন্টাইনরা।

হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ায় গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পেরুর বিপক্ষে খেলতে পারেননি মেসি। সেই ম্যাচে জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে তিন পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন লওতারো মার্তিনেজ। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কোপায় এবারই প্রথম শুরুর একাদশে দেখা গেল দুজনকে। তবে দুজনের কেউ গোল পাননি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডারের একমাত্র গোলে সেমির স্বপ্ন দেখছিল আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ৩৫ মিনিটে। মেসির কর্নার কিক থেকে হেড নিয়েছিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। তাঁর মাথা ছুঁয়ে আসা বলে হেড নিয়ে লা আলবিসেলেস্তেদের এগিয়ে দেন লিসান্দ্রো। বিরতির পর সমতায় ফিরতে আক্রমণে ধার বাড়ায় ইকুয়েডর। ৬২ মিনিটে সমতায়ও ফিরতে পারত ফেলিক্স সানচেজের শিষ্যরা। কিন্তু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন এনের ভ্যালেন্সিয়া। পেনাল্টি পেয়েছিল ইকুয়েডর। স্পট কিক থেকে জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন ভ্যালেন্সিয়া। তাঁর নিচু শট লাগে গোলবারে।

তবে ঠিকই সমতায় ফেরে ইকুয়েডর। সেটিও অন্তিম মুহূর্তে। যোগ করা প্রথম মিনিটে ইয়েবোহার লম্বা ক্রস থেকে হেডে বল আর্জেন্টিনার জালে পাঠিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপনে মেতে ওঠেন কেভিন রদ্রিগেজ। গোলপোস্টের কাছে থাকা জর্ডি কাইসেদো অফসাইডে ছিলেন কি না, সেটি ভিএআরে পরীক্ষার পর গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। ইকুয়েডরের এই তিনজন মাঠে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। এরপর দুটি আক্রমণে আর্জেন্টাইনদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল ইকুয়েডর। একটু পরেই ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই স্বস্তির হাসি হাসে আর্জেন্টিনা। কোপা আমেরিকায় কখনো ইকুয়েডরের বিপক্ষে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন রেখে শেষ চার নিশ্চিত করলেন মেসি-এমিরা। সূত্র : আজকের পত্রিকা