জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ প্রতিষ্ঠার পর গত পাঁচ বছরে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার ৪২ হাজার ৪০ নারী ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছেন।

জাতীয় জরুরি সেবার একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ৯৯৯ প্রতিষ্ঠার পর এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৪ কোটি ২৫ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৩ জন মানুষ সহযোগিতা পেতে ফোন দিয়েছেন। ফোনের ২০ শতাংশ নারী এবং ৮০ শতাংশ পুরুষ। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৩টি কল জরুরি ছিল; তাদের মধ্যে ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ পুলিশের, ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স এবং ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ ফায়ার সার্ভিসের সেবা নিয়েছেন। এসব কলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেবা চেয়েছেন ভুক্তভোগী নারী ও শিশুরা।

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ৬৩ জন, ধর্ষণচেষ্টার শিকার ১ হাজার ৪০৮ জন, ধর্ষণের শিকার ২ হাজার ৮৪০, হত্যার শিকার ১ হাজার ৪১১ জন, যৌন নিপীড়ন ৬ হাজার ৬২৬ জন, মা-বাবার নির্যাতনের শিকার ৪৭০ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার ৯২৮ জন, গৃহনির্যাতনের শিকার ১০ হাজার ৪৮৬ জন এবং অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৭ হাজার ৮৩৪ জন নারী ফোন দিয়ে সেবা নিয়েছেন।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অনন্য ভূমিকা:

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯ হাজার ৩৪৮টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছে জাতীয় জরুরি সেবা। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৮২৮টি, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৪৯০টি, ২০২০ সালে ৪ হাজার ৪৮০টি, ২০২১ সালে ৪ হাজার ৬৫৮টি এবং ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৯২টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সহযোগিতার জন্য ফোন এসেছে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে ভূমিকা:

২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ হাজার ৪২৩টি আত্মহত্যাসংক্রান্ত ফোন এসেছে ৯৯৯-এ। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৩ হাজার ৩৫২ জন। জাতীয় জরুরি সেবার সহায়তায় আত্মহত্যা থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৫ হাজার ৭১ জন নারী-পুরুষকে।

এএলআই প্রযুক্তি যুক্ত হয়নি:

টাঙ্গাইলে গত জানুয়ারিতে রাতে বাসে ডাকাতি হয়। অনেক যাত্রীকে কুপিয়ে আহত করে ডাকাত দল। ডাকাতেরা চলে যাওয়ার পর একজন যাত্রী ৯৯৯-এ কল করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন পুলিশ সদস্য গভীর রাতে কলটি রিসিভ করেন। তিনি যাত্রীর কাছে বারবার ডাকাতির স্থানের নাম জানতে চান। কিন্তু যাত্রী রাতের অন্ধকারে কোনো স্থানের নাম বলতে পারছিলেন না। এতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে দেরি হয় জাতীয় জরুরি সেবার সদস্যদের। যাত্রীর কাছ থেকে অনেক বর্ণনা শোনার পর সেখানে পুলিশ যায়। কিন্তু অটো কলার লোকেশন থাকলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না বলে জানিয়েছে ৯৯৯-এর একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, শুরু থেকেই ‘অটো কলার লোকেশন’ প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু গত পাঁচ বছরেও সম্ভব হয়নি।

জনবল সংকট :

বিভিন্ন ইউনিট থেকে পুলিশ সদস্যদের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ বদলি করা হয়। কয়েক মাস পর তাঁরা আবার বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এখানে পুলিশ সদস্যরা কাজ করতে চান না। কারণ ভিন্ন আঙ্গিকে পুলিশিংয়ের সঙ্গে তাঁরা অভ্যস্ত নন। এ জন্য কেউ কেউ তদবির করে এখান থেকে চলে যান। অপরদিকে, থানায় জাতীয় জরুরি সেবার জন্য আলাদা কোনো টিম না থাকায় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে গিয়ে সেবা দিতে হয়। তাই ঘটনাস্থলে যেতে প্রায়ই পুলিশের বিলম্ব হয়। এ ছাড়া জাতীয় জরুরি সেবা পুলিশের আলাদা ইউনিট হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। তাই ইচ্ছা করলেই জাতীয় জরুরি সেবা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

আলাদা ইউনিটের প্রস্তাব:

জাতীয় জরুরি সেবা আলাদা ইউনিট হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ চলছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ বলেন, ‘আলাদা ইউনিটের প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তারা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল, সেগুলো ঠিক করে আমরা আবার পাঠিয়েছি। কাজ চলছে, আশা করি আলাদা ইউনিট হবে। এ ছাড়া অটো কলার ইনফরমেশন সিস্টেম আগামী এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।’ সূত্র: প্রথম আলো।