পিবিআইয়ের হেফাজতে গ্রেপ্তার জাহিন চৌধুরী। ছবি: পিবিআই।

পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) অভিযানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম জাবের হোসেন চৌধুরী ওরফে জাহিন।

আজ ১ জুন রাজধানীর পশ্চিম রামপুরায় তাঁর বর্তমান বাসা থেকে জাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, সাকিনা মল্লিক (৫৬) নামের এক নারী মিরপুর মডেল থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেন যে, তিনি পেশায় একজন শিক্ষিকা। তিনি গত ২৮ মে একটি অনলাইন গ্রুপের সাথে নিঝুমদ্বীপে বেড়াতে যান। ওই গ্রুপের সদস্য হিসেবে আসামি জাহিন চৌধুরীর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। আসামি নিজেকে “অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অডিট (অ্যাডমিন অ্যান্ড প্ল্যানিং হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট) হেডকোয়ার্টার্স অ্যান্ড ভিভিআইপি টার্মিনাল, হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। পরে আসামির সাথে তাঁর মোবাইল ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। ওই অনলাইন গ্রুপের সাথে তিনি ও আসামিসহ আরও বেশ কিছু সদস্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর সাপাহারে এবং ১৬ মার্চ শ্রীমঙ্গল ও সিলেটে বেড়াতে যান। সিলেট থেকে আসার কিছুদিন পর আসামি জাহিন চৌধুরী তাঁকে জানান, চাকরির সুবাদে সরকার তাঁকে গাড়ি দেবেন, যার মূল্য ৮৫ লাখ টাকা। ওই টাকার বিপরীতে সমপরিমাণ টাকার ব্যাংক স্টেটমেন্ট অফিসে জমা দিতে হবে। জাহিন জানান, ওই ৮৫ লাখ টাকার বিপরীতে তাঁর ২৮ লক্ষ টাকা কম আছে। এ কারণে আসামি তখন তাঁর কাছে টাকাটা ধার হিসেবে চান। জাহিন এই টাকা তাঁর ব্যাংকে ৭২ ঘন্টার জন্য ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য অনুরোধ করলে তিনি সরল বিশ্বাসে আসামির কথায় রাজি হয়ে গত ২৮ মার্চ জাহিনের অ্যাকাউন্টে ১১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার করেন।
পরে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও জাহিন টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করতে থাকেন।

পরে অভিযোগকারী সাকিনা মল্লিক জাহিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পান।

অভিযোগকারীর সন্দেহ হলে তিনি হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যোগাযোগ করেন এবং জানতে পারেন জাহিন চৌধুরী নামে সেখানে কেউ চাকরি করেন না। তখন তিনি বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুর মডেল থানা-পুলিশ তদন্তকালে আসামি গ্রেপ্তারে সহযোগিতা চেয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবরে তদন্ত কর্মকর্তা অধিযাচনপত্র পাঠান।

অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএমের তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা এর নিবিড় তদারকিতে একটি টিম অধিযাচনপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম রামপুরার বাসা থেকে প্রতারক জাহিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জনৈক সাকিনা মল্লিককে প্রতারিত করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। আসামি বেকার হলেও নিজেকে সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। তিনি লোকজনকে চাকরি দেওয়া, স্বর্ণের বার ও কম মূল্যে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। আসামি জানান, টাকাপয়সা আছে এমন বয়স্ক এবং বিধবা মহিলারা তাঁর মূল টার্গেট। আসামি প্রতারণার মামলায় ইতিপূর্বেও হালিশহর থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং জামিনে মুক্ত হয়ে একইভাবে বিভিন্ন লোককে প্রতারিত করে আসছিলেন।