সাভারের পারুল বেগম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন বিষয়ে ব্রিফিং করেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।

ঢাকার সাভারের বক্তারপুরে আলোচিত পারুল বেগম (৪৫) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। লাশের পাশে পাওয়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সূত্র ধরে এই রহস্য উদঘাটন করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাগেরহাটের একজন ইউপি সদস্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ সোমবার বেলা ১১টায় সামগ্রিক ঘটনা বর্ণনা করে ব্রিফিং করেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি সায়েদুর রহমান, বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. আব্দুল্লাহ- আল-মামুন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পারুল হত্যাকাণ্ডের আসামি মো. জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজজামালকে গত বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার লালবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই রাতে জামালের সহযোগী মো. মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজকে (৪৬) মিরপুর দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি সদস্য মো. হালিম হাওলাদারকে (৫২) গতকাল রোববার বাগেরহাট জেলার মোংলা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হালিম হাওলাদার মোংলা থানার চিলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য।

আসামি জামালের বাড়ি পিরোজপুর সদরে। তিনি রাজধানীর লালবাগ এলাকায় থাকেন। আর মশিউরের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলায়, তিনি থাকেন রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হালিম হাওলাদার তাঁর প্রতিপক্ষ ইউপি সদস্য প্রার্থী বিল্লাল সরদারকে ফাঁসানোর জন্য এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক ২০ দিন আগে হালিম আসামি জামালের সঙ্গে মোংলায় দেখা করেন। জামালকে অগ্রিম হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা ও বিল্লাল সরদারের এনআইডির ফটোকপি দেন হালিম। এরপর জামাল তাঁর বন্ধু দরজি মাস্টার মশিউর ওরফে মিলনের সঙ্গে পরামর্শ করে। মিলন তাঁর পূর্ব পরিচিত ও কথিত বান্ধবী পারুলকে হত্যাকাণ্ডের টার্গেট হিসেবে পরামর্শ দেয়। জামাল তখন পারুলের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে তাঁকে বিয়ে করার কথা বলে সাভারের বক্তারপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন। বাসা ভাড়া নিয়ে গত বছরে ৭ সেপ্টেম্বর বাসায় ওঠেন তাঁরা। জামাল পরিকল্পনামতো ওই রাতেই পারুলকে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশের পাশে বিল্লাল সরদারের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

পারুল বেগম
সেই এনআইডির সূত্র ধরে পিবিআইয়ের তদন্ত দল বিল্লাল সরদারকে খুঁজে বের করে। তদন্ত করে নিশ্চিত হয়, বিল্লাল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। বিল্লাল তাঁর শত্রু হিসেবে ইউপি সদস্য হালিম হাওলাদারসহ দুজনের নাম বলেন। তাঁদের ব্যাপারে তদন্ত করে পিবিআই জানতে পারে, এ হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত জামালের ঘন ঘন যোগাযোগ হয়েছে। জামালকে গ্রেপ্তারের পর সাভারে ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারকে ছবি দেখালে তিনি জামালকে সনাক্ত করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জামাল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি এ পরিকল্পনায় জড়িত হালিম হাওলাদারসহ সবার নাম উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হালিম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার এসপি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম (সেবা) বলেন, হালিম হাওলাদার প্রতিপক্ষ বিল্লালকে ফাঁসানোর জন্য এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন ।

হত্যার শিকার পারুল বেগমের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। তিনি সাভারে বাসা ভাড়া নিয়ে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পারুলের ভাই মোমিনুল হক ৯ সেপ্টেম্বর সাভার মডেল থানায় মামলা করেন। সাভার থানার পুলিশ মামলাটি ১১ দিন তদন্ত করে। পরে পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার নেয়।
ডিআইজি (পিবিআই) বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের (পিপিএম- সেবা) সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মো. সালেহ ইমরানসহ একটি চৌকস তদন্ত দল মামলাটি তদন্ত করেন।