মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে যুক্ত হয়ে হজ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ছবি: বাসস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার হজযাত্রীদের হয়রানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে এর প্রভূত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। ‘যাঁরা হজ পালন করতে যাচ্ছেন, তাঁরা যেন সুষ্ঠুভাবে হজ পালন এবং ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য।’ খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩ জুন (শুক্রবার) হজ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় তিনি হজযাত্রীদের কাছে দেশের সার্বিক মঙ্গল কামনায় দোয়া চান।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ৯ জিলহজ ১৪৪৩ হিজরি তারিখে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১-এই দুই বছর বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় এ বছর সারা বিশ্বের ১০ লাখ হাজি নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

ইসলামকে ‘শান্তির ধর্ম’ এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম’ আখ্যায়িত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর সম্মান রক্ষা এবং হজ পালনকালে সৌদি আইন মেনে চলার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকার জন্যও সম্মানিত হজযাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ-এর মাধ্যমে আমরা আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছি। ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই হয়ে যায়, সেখানে কোনো হয়রানি হয় না। মালপত্রও যাতে যথাযথ স্থানে পৌঁছে যায়, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডেডিকেটেড বিমান সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের মূলমন্ত্র যে ‘শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা’, সে সম্পর্কে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে তাঁর দেওয়া ঐতিহাসিক বেতার ভাষণের কিঞ্চিৎ অংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হজরত নবী করীমের (সা.) ইসলাম। যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।’

সরকারপ্রধান বলেন, তাঁর সরকার সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়ন করেছে। যাতে করে হজ যাত্রীরা কোনো রকম হয়রানি ছাড়া হজে গিয়ে হজ পালন করতে পারেন। তিনি বলেন, আজকের উন্নত হজ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু তাঁর নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ফসল। অতীতে বিভিন্ন সময় ওমরাহ এবং হজ পালন করতে গিয়ে তিনি মিনাতে হাজিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজ চোখে হাজিদের যেসব সমস্যা দেখেছেন, সে সবই পরবর্তী সময়ে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করা, যা ধাপে ধাপে আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এ জন্য সৌদি বাদশাহ এবং ‘দুটি বড় মসজিদের খাদেম’ যখনই যিনি ছিলেন এবং যুবরাজদের আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

অতীতের থেকে বর্তমানের হজ ব্যবস্থাপনা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিবর্তন আমার নিজের দেখা এবং সে জন্য আমি সত্যই খুব আনন্দিত। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশে আজকে ‘ই-হজ ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করেছে, ফলে অতীতের মতো আর হাজিদের কষ্ট হয় না। সেই কষ্ট আমরা দূর করতে পেরেছি। এ জন্য তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, হাব, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করায় ধন্যবাদ জানান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের কাছে দেশ ও দেশের জনগণ এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য দোয়া প্রত্যাশা করে বলেন, করোনাভাইরাসের মতো এ ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে যেন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব তথা সমগ্র মানবজাতি রক্ষা পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যেন বাংলাদেশ ও বিশ্ব রক্ষা পায় এবং বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, সেই উন্নয়নের পথে যেন আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারি, সে জন্যও হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারে এবং উন্নত সুন্দর জীবন পেতে পারে।
সকল হজযাত্রীর আকাঙ্ক্ষা যেন আল্লাহ তায়ালা পূরণ করেন এবং তাঁদের জন্য হজ যেন সহজ হয় ও আল্লাহর দরবারে যাতে কবুল হয়, সে দোয়াও করেন তিনি।

তিনি বলেন, যাঁরা হজে যাবেন, তাঁরা সৌদি আরবের সমস্ত নিয়মকানুন এবং আইন মেনে চলবেন। কারণ, ইবাদত বন্দেগি করার পাশাপাশি দেশের মানসম্মান রক্ষা করাও সকলের কর্তব্য। পাশাপাশি নিজেরা নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন, যাতে সুস্থ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করতে পারেন। পরে তিনি হজযাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মো. শাহাদত হোসেন তসলিমও বক্তৃতা করেন।