অং সান সু চি। ছবি: এএফপি।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সু চির আরও একটি মামলার রায় হয়েছে। এই রায়ে তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন মামলায় তাঁকে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। বিচারের সঙ্গে জড়িত একজনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করার পর দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৭৭ বছর বয়সী সু চির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছিল। আজ শুক্রবার সবশেষ তাঁকে দুর্নীতির পাঁচটি অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সব কটি মামলা মিলে তাঁর ৩৩ বছরের কারাদণ্ড হলো। গত বছরের জুনে মিয়ানমারের গোপন আদালতে বিচার শুরু করেছিল জান্তা সরকার।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি লিখেছিলেন অং সান সু চি। সেই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সু চিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

এরপর নির্বাচনী প্রচারণার সময় করোনাবিধি না মানা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ও এ বছরের ১০ জানুয়ারি দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় সু চিকে।

লাইসেন্সবিহীন ওয়াকিটকি ও সিগন্যাল জ্যামার কিনে আমদানি-রপ্তানি আইন এবং টেলিযোগাযোগ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে এ বছরের ১০ জানুয়ারি সু চিকে যথাক্রমে দুই বছর ও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সু চির বিরুদ্ধে ঘুষ হিসেবে ৬ লাখ ডলার ও ১১ কেজি ৪০ গ্রাম ওজনের সোনার বার গ্রহণের অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগে তাঁকে এ বছরের ২৭ এপ্রিল তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

একটি ফাউন্ডেশনের তহবিল তছরুপ ও সরকারি জমি লিজ দেওয়ার মামলায় সু চিকে এ বছরের ১৫ আগস্টে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। এরপর নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার অভিযোগে এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর সু চিকে কঠোর শ্রমসহ তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করার দায়ে এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সূ চিকে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের ব্যবসায়ী মং উইকের কাছ থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এ বছরের ১২ অক্টোবর তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর হেলিকপ্টার ইজারা দিয়ে রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার করাসহ দুর্নীতির আরও পাঁচটি অভিযোগে সু চিকে আজ (৩০ ডিসেম্বর) সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করেছেন। তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে বিভিন্ন সেনা সরকারের অধীনে বন্দিদশায়। ২০১৫ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল সু চির দল। পরে তাঁর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল। মিয়ানমারে অবসান হয়েছিল ৪৯ বছরের সেনা শাসনের।

তবে সু চি বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয়।। এর পর থেকে সূ চি সামরিক বাহিনীর হেফাজতে আছেন।

সূ চি অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছেন। তবে সামরিক সরকার বলেছে, অভিযোগগুলো বৈধ। সূত্র: আজকের পত্রিকা