মালির জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের পুলিশপ্রধান পুলিশ কমিশনার জেনারেল বেটিনা প্যাট্রিসিয়া বুগানি বাংলাদেশের এক শান্তিরক্ষীকে পদক পরিয়ে দিচ্ছেন।

জাতিসংঘ শান্তি পদক পেলেন মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। গত ৩০ নভেম্বর মালির রাজধানী বামাকোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ ফর্মড পুলিশ ইউনিট-১ (রোটেশন-৮) এর ১৩৯ জন সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তি পদক পরিয়ে দেন মালির জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের পুলিশপ্রধান পুলিশ কমিশনার জেনারেল বেটিনা প্যাট্রিসিয়া বুগানি।

এ উপলক্ষে ব্যানএফপিইউ-১ আয়োজিত মেডেল প্যারেড ও শান্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন মিনুসমা এসআরএসজির সম্মানিত প্রতিনিধি ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মিস. ক্রিস্টেন ডাউনি। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ফোর্স চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জো মিশেল মিউনিয়েখ, প্রিন্সিপাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার এমানুয়েল মঞ্জিম্বো, আনপোল চিফ অব অপারেশন কন্ট্রোলার জেনারেল সারফাদিন মারগুই মাহামাত, এফপিইউ কো-অর্ডিনেটর সুপারিনটেনডেন্ট স্যামুয়েল শুগাবা হাম্মাঞ্জাবু, আনপোল চিফ অব স্টাফ আবদু আদাবু মুসা, কনসাল অব বাংলাদেশ ইন মালি সিমপারা মামাদু এনফা, মিনুসমাতে কর্মরত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, মিনুসমা এফপিইউ কো-অর্ডিনেশন অফিসে কর্মরত বিভিন্ন দেশের পুলিশ কর্মকর্তা এবং বেনিন (ম্যাককয়) ও সেনেগালের (এফপিইউ) কমান্ডারগণ।

৩০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ইউনাইটেড ন্যাশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি-র (মিনসুমা) সদর দপ্তর ব্যানএফপিইউ-১ ক্যাম্পে এ পদক দেওয়া হয়।

প্রথমে ব্যানএফপিইউ-১ এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হাসান মো. শওকত আলী প্রধান অতিথিকে প্যারেড গ্রাউন্ডে অভ্যর্থনা জানান। সেখানে প্যারেড কমান্ডার ব্যানএফপিইউ-১ এর প্লাটুন কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল সশস্ত্র সালাম ও বর্ণিল প্যারেড প্রদর্শন করেন। মনোমুগ্ধকর প্যারেড প্রদর্শনী শেষে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের ১৩৯ জন পুলিশ সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক প্রদান করা হয়। মালিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিনুসমা ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেওয়া হয়। একই সাথে মিনুসমাতে কর্মরত বিভিন্ন দেশের ৫৫ জন আইপিওগণকেও জাতিসংঘ শান্তি পদক দেওয়া হয়।

প্রধান অতিথি পুলিশপ্রধান পুলিশ কমিশনার জেনারেল বেটিনা প্যাট্রিসিয়া বুগানি তাঁর বক্তব্যে ব্যানএফপিইউ-১ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ পরিচালনা করে দুর্দান্ত পেশাদারত্বেরও উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে কন্টিনজেন্টের বিভিন্ন অপারেশনাল কর্মকান্ডের পাশাপাশি সিকিউরিটি ও প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ, তাঁদের দক্ষতা ও পেশাদারত্বেরও প্রশংসা করেন।

বিশেষ অতিথি মিনুসমা এসআরএসজির প্রতিনিধি ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মিস. ক্রিস্টেন ডাউনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও নিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করে সবাইকে অভিনন্দন জানান। মিশন ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে ব্যানএফপিইউ-১ এর সক্রিয় সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের এ মেডেল প্রাপ্তি তাঁদের সেই অবদানের স্বীকৃতি।

পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ব্যানএফপিইউ এর সদস্যরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ব্যানএফপিইউ-১ (রোটেশন-৮) এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হাসান মো. শওকত আলী তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যবৃন্দ মালির রাজধানী বামাকোতে পেশাদারত্বের নিদর্শন স্থাপনস্বরূপ দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সেরা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর প্রিয় বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্যবৃন্দ দেশের সীমারেখার বাইরেও বাংলাদেশের পতাকা বহন করে চলেছে।

পরে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ব্যানএফপিইউ-১ ক্যাম্পে বৃক্ষরোপণ করেন এবং ব্যানএফপিইউ-১ এর সকল কর্মকর্তা, উপস্থিত আইপিওদের সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলেন।

একই দিনে সন্ধ্যা সাতটায় মেডেল প্যারেড উপলক্ষে ব্যানএফপিইউ-১ (রোটেশন-৮) এর ক্যাম্পে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে আসন অলংকৃত করেন মিনুসমা পুলিশপ্রধান পুলিশ কমিশনার জেনারেল বেটিনা প্যাট্রিসিয়া বুগানি। এ ছাড়া মিনুসমা হেডকোয়ার্টারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। দেশীয় গান, গীতিনাট্য, নাটক, স্বাধীনতার গানের মাধ্যমে দেশীয় সংস্কৃতিকে মালির বুকে তুলে ধরা হয়, যার ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

পরিশেষে ব্যানএফপিইউ-১ এর কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হাসান মো. শওকত আলী প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিদেরকে শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহার প্রদান এবং মিনুসমা কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। সর্বশেষে উপস্থিত অতিথিবৃন্দের নৈশভোজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।