তেলসমৃদ্ধ আবেই এলাকা নিয়ে সুদান ও দক্ষিণ সুদান সীমান্তে ভয়াবহ সহিংসতায় ৫২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চলে হামলা ও সহিংসতায় কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সামগ্রিকভাবে গত সপ্তাহান্তে আবেই অঞ্চলে নারী, শিশুসহ ৫২ জন মারা গেছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জানিয়েছেন। সুদান এবং দক্ষিণ সুদান উভয়ই তাদের যৌথ সীমান্ত বরাবর তেলসমৃদ্ধ এই অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে থাকে।

আবেইয়ের তথ্যমন্ত্রী বুলিস কোচ জানিয়েছেন, গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দক্ষিণ সুদানের ওয়ারাপ রাজ্যের সশস্ত্র যুবকেরা প্রতিবেশী আবেইতে হামলা চালায়। সীমানা নিয়ে বিরোধে ২০২১ সাল থেকে এ ধরনের হামলা চলছে এবং সর্বশেষ এই হামলা ছিল সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা। হামলায় নিহতদের পাশাপাশি আরও ৬৪ জন আহত হয়েছেন।

এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে সহিংসতায় জাতিসংঘের এক শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছেন। নিহত ওই শান্তিরক্ষী ঘানার সেনাসদস্য। ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম সিকিউরিটি ফোর্স ফর আবেইয়ের (ইউএনআইএসএফএ) বিবৃতি অনুসারে, গত শনিবার আবেই এলাকার তিনটি স্থানে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এর ফলে বহু মানুষ হতাহত হয় এবং সহিংসতায় আটকে পড়াদের নিরাপত্তা দিতে বেসামরিক লোকদের ইউএনআইএসএফএ ঘাঁটিতে সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষের সময় ইউএনআইএসএফএর একটি ঘাঁটিও আক্রমণের শিকার হয়। আক্রমণটি প্রতিহত করা হলেও ‘দুঃখজনকভাবে ঘানার একজন শান্তিরক্ষী ঘটনার সময় নিহত হন’ বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বুলিস কোচ বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ব্যাপক ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং আমরা কারফিউ জারি করেছি।’

দক্ষিণ সুদানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেশ সাধারণ ঘটনা। তবে শনিবারের (২৭ জানুয়ারি) এই সংঘর্ষে কারা জড়িত ছিল, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এ ছাড়া তেলসম্পদে সমৃদ্ধ আবেই অঞ্চলে প্রায়ই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে ডিনকা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো প্রশাসনিক সীমানার অবস্থান নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত।

কোচ বলেন, ওয়ারাপের ডিনকা যুবক এবং নুয়ের জাতিগোষ্ঠীর একজন বিদ্রোহী নেতার বাহিনী আবেইতে ডিনকাস এবং নুয়েরদের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছিল। হামলা-সহিংসতার পর এখন শত শত বেসামরিক নাগরিক ইউএনআইএসএফএর ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছে।

ওয়ারাপ রাজ্যের তথ্যমন্ত্রী উইলিয়াম ওল বলেছেন, তার সরকার মারাত্মক এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে আবেই প্রশাসনের সাথে যৌথ তদন্ত সমন্বয় করবে।

বিবিসি বলছে, ডিনকাস এবং নুয়েরদের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার কারণে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোক নিহত এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আবেই অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে সুদান এবং দক্ষিণ সুদানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ২০১১ সালে সুদান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আলাদা রাষ্ট্র হয় দক্ষিণ সুদান। পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের একটি প্যানেল তেলসমৃদ্ধ এই অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য গণভোটের প্রস্তাব করে। কিন্তু কে ভোট দিতে পারবে, তা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।