মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে শহীদ পুলিশ সদস্য এবং নাম না জানা অসংখ্য শহীদের গণকবর সংরক্ষণ ও স্মরণে নির্মিত ‘স্মৃতি ৭১’-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। খবর জাগো নিউজের।

রোববার (৭ আগস্ট) বেলা দেড়টায় নগরের রিকাবীবাজারে সিলেট জেলা পুলিশ লাইনসে এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

এরপর পুলিশের ডিআইজি, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ও মহানগর কমান্ড, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং জেলা প্রেসক্লাব নেতারা স্মৃতি ৭১-এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, দেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানী নগর সার্কেল) রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর পুলিশের পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে সিলেটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে পুলিশসহ অনেকে শহীদ হন। তাঁদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য মানুষকে গণকবর দেওয়া হয় শহরের রিকাবীবাজার এলাকার পুলিশ লাইনসের ভেতর একটি ডোবায়। সেই শহীদদের স্মরণে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়। রিকাবীবাজারের পার্শ্ববর্তী মুন্সিপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে এসব শহীদের মরদেহ এনে স্বজন ও পরিচিতজনেরা পুলিশ লাইনসের ভেতরে একটি ডোবায় গণকবর দেন।

কতজনকে এখানে গণকবর দেওয়া হয়েছে, সে পরিসংখ্যান কোথাও সংরক্ষিত না থাকলেও গণকবর দেওয়া আটজন শহীদের নাম-তথ্য জানা গেছে। তাঁরা ওই সময় পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। তাঁরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল লতিফ, হাবিলদার আবদুর রাজ্জাক, কনস্টেবল মোক্তার আলী, শহর আলী, আবদুস ছালাম, মো. হানিফ ব্যাপারী, মনিরুজ্জামান ও পরিতোষ কুমার।

শহীদ পুলিশ সদস্যরা ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল জিন্দাবাজার এলাকার তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকের (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাংকের টাকা লুটের উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করে। পরে ৬ এপ্রিল এসব শহীদকে পুলিশ লাইনসে গণকবর দেওয়া হয়। এর বাইরে শহরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ অনেককে এখানে কবর দেওয়া হয়েছে।