পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নরসিংদীর তৎপরতায় জোড়া খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। হত্যাকাণ্ডকে কৌশলে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন আসামিরা।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম, পিপিএম।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন নরসিংদীর রায়পুরা থানা এলাকার মো. মামুন মিয়া (২৬), সোহাগ মিয়া (২০), মাসুদ মিয়া (১৯) এবং বেলাব থানা এলাকার মো. মাসুম মিয়া (৪১)। তাঁদের মধ্যে মামুন, সোহাগ ও মাসুদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআই জানায়, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট রাতে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ইটাখোলাসংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হন। তাঁরা হলেন রায়পুরা থানা এলাকার শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) এবং বেলাব থানা এলাকার মো. মনির হোসেন (৩৪)। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় মাইক্রোবাসচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক মো. সাখাওয়া হোসেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ৯ নভেম্বর মাইক্রোবাসের মালিক মো. মাসুম মিয়াকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ভুক্তভোগী বিপ্লবের পরিবার আদালতে মামলা করে এবং হাইওয়ে পুলিশের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেয়। পরে মামলাটি পিবিআই নরসিংদীকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, ২০১৯ সালে রায়পুরার লোচনপুর বাজারে দুলাল গাজী নামের এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বিপ্লব। তবে বিপ্লবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কারও সাহস হয়নি। তদন্ত করে জানা যায়, বিপ্লবের বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ১০টি মামলা ও ১১টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এক পর্যায়ে বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। জামিনে ছাড়া পাওয়ার দিন মামলার দুই সাক্ষী জুয়েল (২২) ও নাঈমকে (২৩) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া পিবিআইয়ের যে কর্মকর্তা বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অভিযোগ করেন বিপ্লব। পরে অভিযোগটি জেলা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। মামলার বিষয়ে আলাপ শেষে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে মনিরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে রওনা দেন বিপ্লব। কিছুক্ষণ পর জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই জানতে পারে, বিপ্লবের কর্মকাণ্ডে এলাকার অনেকেই তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। বিশেষ করে ডিশ ব্যবসা নিয়ে নিহত বিপ্লবের সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি মামুন মিয়ার দ্বন্দ্ব ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা।
আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাতে পিবিআই জানায়, পরপর তিনবার বিপ্লবকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। অবশেষে তৃতীয়বারে এসে সফলতা মেলে। এ দিন লোচনপুর থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নরসিংদীর উদ্দেশে রওনা দেন আসামিরা। পথে বারৈচা থেকে একটি কালো মাইক্রোবাস সংগ্রহ করেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য মোটরসাইকেলে চড়ে সোহাগ ও ফয়সাল নরসিংদীতে আসেন। অন্যরা নরসিংদী শহরের ভেলানগর জেলখানা এলাকায় অবস্থান করেন। বিপ্লবের সার্বক্ষণিক অবস্থান পর্যবেক্ষণে রাখেন সোহাগ ও ফয়সাল। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আসেন বিপ্লব ও মনির। খবর পেয়ে মহাসড়কে অবস্থান করা আসামিরা তাঁদের অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে মাইক্রোবাসটি তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বিপ্লব ও মনিরের মৃত্যু হয়।
পিবিআইপ্রধান বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৯ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থদাতা হিসেবে ওমর ফারুক মোল্লা নামে এক প্রবাসীর নাম উঠে এসেছে। তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।