শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সড়ক পারাপার নিশ্চিত করতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘নিজস্ব ট্রাফিক ব্যবস্থা’ থাকতে হবে জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে নিজেদের কর্মী দিয়ে এই ব্যবস্থা চালু করে, সে জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলেছেন তিনি।

বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের পাশে আন্ডারপাস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এই নির্দেশনা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “স্কুল যখন ছুটি বা স্কুলে যখন ছাত্রছাত্রীরা যায়, সেখানে প্রত্যেকটা স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে তাদের সহযোগিতা করতে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে যথাযথ সচেতন হবে এবং তাদেরও নিজস্ব লোক থাকতে হবে ওখানে, যাতে ছেলেমেয়েরা নিরাপদে সড়কটা পার হতে পারে।”

এর কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক সময় অন্যের কথা তারা শুনতে চায় না। কিন্তু যদি স্কুলের কর্তৃপক্ষ কেউ থাকে, তার কথা ছাত্রছাত্রীরা শুনবে। এ ব্যাপারে আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত আমি আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব যে, আপনারা এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই নির্দেশটা দেবেন।”

রাস্তায় চলাচল করার সময় ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই ট্রাফিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের তরফ থেকে প্রত্যেকটা স্কুল কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে একেবারে ছোট বেলা থেকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। প্রত্যেক স্কুলে এই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। কলেজ ইউনিভার্সিটিতেও নিতে হবে। রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটলেও সব সময় যেদিক থেকে যান চলাচল করে, তার উল্টো দিক থেকে হাঁটতে হয়, যাতে সামনে থেকে দেখা যায় গাড়িটা আসছে।”

পথচারীদের উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা দরকার এবং সেটা মেনে চলা দরকার। ট্রাফিক রুলস সকলে মেনে চলবেন। মোবাইল ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে ওই সড়ক দিয়ে চলা বা রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা, রেললাইন পার হওয়া বা সড়ক পার হওয়া এটা কখনোই কেউ করবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।”

যেখান সেখান থেকে হঠাৎ করে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এই রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনাটা ঘটে। কাজেই সেই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি জায়গায় ফুটওভারব্রিজ করা আছে বা আন্ডারপাস করে দেওয়া হচ্ছে, কাজেই সকলকে সেটা মেনে চলতে হবে।”

যেকোনো দুর্ঘটনায় গাড়ি চালককে ‘পেটানোর’ একটি প্রবণতা রয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরেই ফেলা হয়, হত্যাই করা হয়। যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, আমার এটা অনুরোধ থাকবে সকলের কাছে যে, সেই দুর্ঘটনা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল এবং কার দোষে ঘটল, সেটা বিবেচ্য বিষয়, সেটা খুঁজে দেখা দরকার।”

কেউ যাতে আইন হাতে তুলে না নেনে, সে বিষয়ে সতর্ক করে সরকারপ্রধান বলেন, “অ্যাক্সিডেন্ট, অ্যাক্সিডেন্টই। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে। সড়কে অনেক সময় গাড়ির সঙ্গে কারও হালকা ধাক্কা লেগে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু গণপিটুনির ভয়ে গাড়িচালক সেই সময় গাড়ি চালিয়ে যান এবং এতে ওই আহত ব্যক্তি বেঁচে থাকার কথা থাকলেও গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান। কাজেই যারা কিছু হলেই ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন এটা কিন্তু ঠিক না।”

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কার দোষ সেটা দেখবে। রাস্তায় মোবাইল ফোন ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‌’অধিকাংশ সময় দেখা যায় কানে, হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে চলছে, অথবা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। যান চলাচল করার সময় হঠাৎ করে তার ব্রেক কষা সম্ভব হয় না।’

ভারী যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে কি না, সেটা নিয়মিত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হাইওয়ের পাশে চালক ও যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার করে দিচ্ছে সরকার। চালকের স্বল্পতা থাকায় সারা দেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর পর যখন চালক ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেন, সেই সময়টায় ভারী গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই তার এমন সহযোগীকে দিয়ে গাড়ি চালানোর বিষয়টা ঠিক না, বরং অন্যায় কাজ। কাজেই এই বিষয়গুলোর দিকে সকলে দৃষ্টি দিলে আর বিশেষ করে যারা পথচারী তারা যদি সতর্ক থাকেন, তাহলে কিন্তু দুর্ঘটনা অনেক কম হবে।

অনুষ্ঠানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক; বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুমধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক; রাঙামাটির নানিয়ারচর চেঙ্গী সেতু উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.নজরুল ইসলাম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এ সময় গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দীন পথচারী আন্ডারপাস, সিলেট সেনানিবাস ও নানিয়ারচর চেঙ্গী সেতু এলাকা রাঙামাটি প্রান্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।