র‍্যাপিড ক্যাশ নামের একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে চক্রের হোতা মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিউ)।

গত বুধবার (১৭ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এটিইউর সাইবার ক্রাইম উইংয়ের পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন জানান, গত মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপদ রোডের একটি কল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।

পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন জানান, র‍্যাপিড ক্যাশ একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিত চক্রটি। সহজে ঋণ পাওয়ার আশায় মানুষও অ্যাপটি নিজেদের মোবাইলে ডাউনলোড করত। অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য হাতিয়ে নিত চক্রটি। পরে ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে আদায় করা হতো টাকা। এভাবে কয়েক দিনের মধ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

তিনি জানান, সাধারণ মানুষ ঋণ নেওয়ার জন্য অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সব কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিত চক্রটি। চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা মহিউদ্দিন মাহি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছেন। তিনি ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। বাংলাদেশে বসে তাঁরা প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের একইভাবে ঋণ দিয়ে প্রতারণা করতেন। তাঁরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ফারহানা ইয়াসমিন আরও জানান, সহজে ঋণ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলত চক্রটি। এরপর মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার নামে ভোটার আইডি ও ছবি নিত। গ্রাহকেরা এই কাজগুলো করার সময় চক্রটি কৌশলে মোবাইলের কল লিস্ট, গ্যালারির ছবি, ভিডিওসহ সব তথ্য হাতিয়ে নিত। এরপর ঋণ দেওয়ার পর উচ্চ সুদে আদায় শুরু করত। কেউ দিতে আপত্তি জানালে তাঁকে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিত। এই অ্যাপটি বানিয়েছে চীনারা। তারা এটাকে এভাবেই বানিয়েছে যে ডাউনলোড করলেই সব তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যেত।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মাহি উচ্চশিক্ষিত। তিনি চীনা ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ। ক্রিপ্ট কারেন্সি কয়েন ব্যবসা সম্পর্কে তিনি জানেন। পাশাপাশি তিনি কথায় অনেক পটু। কীভাবে মানুষকে ভয় দেখাতে হবে, কী বললে টাকা আদায় করা যাবে তিনি সব জানেন। এমনকি তাঁর কর্মীদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে। টাকা আদায় করতে না পারলে কর্মীদের বের করে দিতেন।

গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।