মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাইকে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে হবে যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে।

ভয়েস অব আমেরিকার (ভোয়া) বাংলা সার্ভিসের সাথে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের (রোহিঙ্গাদের) নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে পরিস্থিতি। আমাদের পক্ষে আর কোনো লোক নেওয়া সম্ভব নয়, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।’

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বারবার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিশাল জনসংখ্যার (সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রায়) দায়িত্ব একা একটি দেশের পক্ষে নেওয়া অসম্ভব। শুধু আশ্রয় দেওয়াই নয়, এত বিশাল জনসংখ্যার জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করাও একটি বড় দায়িত্ব, যা কোনো দেশ একা বহন করতে পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং চলমান কোভিড-১৯-এর কারণে সমগ্র বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে, যা বিশ্ববাসীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল (স্থানীয় জনগণ), তারা এখন নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য কতটা আর করতে পারে, কারণ এর বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং দেশটিকে তার জনগণের কথাও ভাবতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোকেরা এখন ঘিঞ্জি বস্তিতে (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) লালিত-পালিত হয়ে বড় হচ্ছে, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ও সুস্থ স্বাস্থ্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ খুবই সীমিত। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আর কোনো লোক নেওয়ার অবস্থানে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান কক্সবাজারের বন ধ্বংস করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্টের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে এবং এলাকার আবাদি জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক রোহিঙ্গা মানব পাচারের পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে এবং ক্যাম্পের অভ্যন্তরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।
এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সময় হত্যা, ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। কাজেই আজকে তারা (বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা) যখন একই ধরনের নির্যাতনের শিকার, সে কথা চিন্তা করেই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দেয়। তিনি বলেন, আমরা নিজের চোখে (১৯৭১ সালে) সেই দুর্ভোগ দেখেছি।