রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিক। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রুশ গ্যাস কিনতে চলেছে সার্বিয়া। তার অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে শিগগির চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সার্বিয়ার সঙ্গে তিন বছরের প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করতে যাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর চুক্তির বিষয়টি জানিয়েছেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিক। জুনের শুরুতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড সফরে গেলে এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

আলেকজান্ডার ভুসিক রুশপন্থী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি চুক্তির বিষয়ে ২৯ মে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছি। আমি আপনাকে যা বলতে পারি তা হলো যে আমরা প্রধান যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, তা সার্বিয়ার পক্ষে খুবই লাভজনক।’

এর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু করলে পশ্চিমা চাপের পরও সার্বিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। সার্ব নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিতে পশ্চিমা চাপের অভিযোগ এনেছেন। সার্বিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, বলকান এই দেশটিকে অবশ্যই পশ্চিমা চাপ প্রতিহত করতে হবে, যদিও এর অর্থ ইইউতে যোগদানের লক্ষ্য পরিত্যাগ করা।

তবে সাধারণ সার্বিয়ানরাও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানে খুব একটা আগ্রহী নয়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, সার্বিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের থেকে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো এক ধরনের ইউনিয়নে যোগদানে আগ্রহী বেশি।

সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ভুলিন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভুসিকের করা চুক্তিটি প্রমাণ করে যে সার্বিয়ার রুশবিরোধী হিস্টিরিয়ায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত কতটা সম্মানজনক।’

এর আগে রুশ মুদ্রা রুবলে মূল্য পরিশোধ করে গ্যাস কিনতে সম্মত হয় অস্ট্রিয়া। দেশটির জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ওএমভি জানিয়েছে, রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধের জন্য তারা রাশিয়ার ব্যাংক গ্যাজপ্রমের সঙ্গে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। যদিও ওএমভি দাবি করেছে, তাদের পদক্ষেপ মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে না। অস্ট্রিয়া তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে।

রাশিয়ার মিত্র বেলারুশ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানির মূল্য তারা রুবলেই দেবে।

রুবলে মূল্য পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় এর আগে পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা মুদ্রা আস্থা হারিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধু নয় এমন দেশকে রুশ মুদ্রা রুবলেই জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রুবল শুরুতে দাম হারালেও পরে জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে তা ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে ১ ডলারের বিপরীতে রুবলের দাম ৬৬ দশমিক ৫০।