রাজশাহীতে গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ পরিচয়ে প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্য (নিচে) ও মঙ্গলবার দুপুরে আরএমপি সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এ তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। ছবি: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ

রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে রাজশাহী কোর্ট কলেজের এক ছাত্রকে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকি ও পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া ৩ হাজার ২০০ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন, দুটি জিআই পাইপ, একটি চাকু, পুলিশের ওয়াকিটকির মতো দেখতে একটি ছোট কালো রঙের ওয়াকিটকি, পুলিশ লেখা ও পুলিশের মনোগ্রাম-সংবলিত দুটি আইডি কার্ড হোল্ডার এবং সাদা-নীল রঙের পুলিশ লেখা-সংবলিত এক জোড়া জুতা জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার হাদির মোড় বউবাজারের মৃত আলম শেখের ছেলে মো. মাসুম শেখ (৩৮), রামচন্দ্রপুর মিরেরচকের মো. সেলিম আলীর ছেলে মো. আশিক আলী (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. মুনতাসির আলী সিয়াম (২৯), কেদুর মোড় বউবাজারের মৃত সামসুলের ছেলে মো. পলাশ (২৭) এবং রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার হলিদাগাছী, খুদির বটতলার মো. মামুনুর রহমান বাবুর স্ত্রী মোসা শরিফা আক্তার সাথী (২৭)। সাথী নগরীর রাজপাড়া থানার ডাবতলার তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আরএমপি সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পলাশ (ছদ্মনাম) রাজশাহী কোর্ট কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ইউনিলিভার পিওরইট কোম্পানির রাজশাহী শাখায় চাকরি করেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য তিনি ‌’রাজশাহী বাসা ভাড়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন।

আসামি শরিফা আক্তার সাথী পলাশকে ফোন দিয়ে বলেন, রাজশাহী কমিউনিটি সেন্টারের পাশে তাঁর মায়ের বাসায় এক রুমের একটি ভালো বাসা আছে। পলাশের এক রুমের বাসা প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি সরল বিশ্বাসে ১৩ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে আসামি সাথীকে ফোন দেন। ফোন পেয়ে সাথী এসে পলাশকে কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম পূর্বপাড়ায় একটি বাড়ির নিচতলার একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানে বাসার চারপাশ দেখার সময় সাথী কৌশলে রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে পলাশকে জড়িয়ে ধরেন। সেখানে ওত পেতে থাকা প্রতারক চক্রের ৪ জন সদস্য রুমে ঢোকেন। তাঁরা সাথীর সঙ্গে পলাশের আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলেন। এরপর পলাশকে চড়থাপ্পড়, হুমকি এবং ফেসবুকে ছবি ছেড়ে দেওয়াসহ পুলিশ পরিচয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ ও চাঁদা দাবি করে। পরে পলাশ তাঁর কাছে থাকা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ১৪ হাজার ৯০০ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে তাঁদের দিয়ে দেন।

এ ঘটনায় পলাশ ডিবি পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশনায় রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আরেফিন জুয়েলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম ও তাঁর দল আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান নির্ণয় করে ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়া ডাবতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।