রাজশাহীতে অটোরিকশাচালককে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন। ছবি: রাজশাহী মহানগর পুলিশ

রাজশাহী মহানগরীতে অটোরিকশাচালককে গলা কেটে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্ৰেপ্তার করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা-পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, মোবাইল ফোনসহ ছিনতাই হওয়া অটোরিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন রাজশাহীর চারঘাট থানাধীন মিয়াপাড়ার মো. রবিউল ইসলামের ছেলে মো. আল-আমিন (২১), বাঘা থানাধীন মালি আনদাহো গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে মো. জনি (২১) ও নাটোরের লালপুর থানাধীন মহরকয়া গ্রামের মো. দিরাজ মণ্ডলের ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম (৩৫)।

আজ রোববার বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আরএমপির কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ১টায় বোয়ালিয়া মডেল থানা-পুলিশ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পূর্বে ড্রেনে পরে থাকা একটি লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের পকেটে থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, লাশটি রাজপাড়া থানাধীন শ্রীরামপুর এলাকার মৃত কবেজ প্রামাণিকের ছেলে আবদুল কাদেরের (৫৫)। এরপর নিহতের বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা করেন। পরে আরএমপির কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ মামলার রহস্য উদঘাটন করার নির্দেশ দেন।

পরবর্তীকালে উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) মো. সাজিদ হোসেনের দিকনির্দেশনায় বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মন পিপিএমের নেতৃত্বে এসআই মো. সাহাবুল ইসলাম ও তাঁর দল এই ‘ক্লু-লেস’ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে।

পরে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় আরএমপি অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।

অবশেষে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওই দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চারঘাটে অভিযান চালিয়ে মূল অভিযুক্ত আল-আমিনকে (২১) হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুসহ গ্রেপ্তার করে।

পরে আল-আমিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর সহযোগী অপর আসামি জনিকে (২১) বাঘা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং চোরাই অটোরিকশা কেনার অপরাধে নাটোর-লালপুর সড়ক থেকে অটোরিকশার যন্ত্রাংশসহ গ্যারেজ মালিক মো. আরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এর আগে আল-আমিন ও পলাতক আসামি কাউসার (২০) অটোরিকশা ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কাউসার হাতেনাতে আটক হলেও আল-আমিন পালিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত লোকজন কাউসারকে পিটুনি দিয়ে চারঘাট থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে কাউসারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এরপর কাউসার ও আল-আমিন এই জরিমানার টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাত ১২টায় আবদুল কাদেরের অটোরিকশাটি ভাড়া করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নির্জন এলাকায় নিয়ে চাকু দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে লাশ সাগরপাড়া নেসকো অফিসের পূর্বে ড্রেনে ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ছিনতাই করা অটোরিকশাটি আসামি আরিফুলের কাছে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে। আরিফুল নগদ ২২ হাজার টাকা দেন। ২২ হাজার টাকার মধ্যে কাউসার আগের জরিমানা বাবদ ১৫ হাজার টাকা নেন। অবশিষ্ট টাকা আসামি আল-আমিন, জনি এবং কাউসারের বাবা মাহাবুবুর ভাগাভাগি করে নেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা আরও জানান, হত্যাকান্ডের সহযোগী অপর আসামি কাউসার (২০) ঘটনার পরদিনই গাজীপুরের কালিয়াকৈরে পালিয়ে যান। ঘটনার দিন কাউসার যে ফোন ব্যবহার করেছিলেন, সেটা তাঁর বাড়ির তাঁর বাবার হেফাজত থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

পলাতক অপর আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।