রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গত বৃহস্পতিবার এই অভিযান চালায়। আজ রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। খবর ডিএমপি নিউজের।
গ্রেপ্তার নারীর নাম জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা। তার কাছ থেকে জঙ্গিবাদের কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড, মেমোরি কার্ডসহ মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। নাবিলার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা করা হয়েছে। আদালতের আদেশে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

আজ সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার) জানান, বৃহস্পতিবার বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের নারী সদস্য নাবিলাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির সিটি-ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশনের সাইবার ইন্টেল টিম।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। একসময় সে ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়ার’খোঁজ পায়। তখন সে এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও আর্টিকেল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে এবং তাদের মতাদর্শ লালন করতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘তিতুমীর মিডিয়া’ পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরে ‘তিতুমীর মিডিয়া’ পেজের অ্যাডমিন উগ্রবাদী জিহাদি কনটেন্ট-সংবলিত আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটগুলোর লিংক তাকে দেয়। এরপর নাবিলা আনসার আল ইসলামের ওই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করে এবং তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শ কঠোরভাবে লালন করে। তাদের মতাদর্শকে সবার সঙ্গে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বেছে নেয়। নাবিলা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও চিরপওয়্যার নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলে।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গিবাদী প্রচারণার জন্য দুটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি চিরপওয়্যার ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। সে ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে ব্যাপক হারে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করত। সে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করে। এনক্রিপটেড সিকিউরড অ্যাপ টেলিগ্রাম ব্যবহার করে সে চারটি অ্যাকাউন্ট এবং টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১৫টির বেশি চ্যানেল নিজে খুলে তা পরিচালনা করত। এসব চ্যানেলে সে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করত। তার নিজের সব কটি টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার আছে, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে। নাবিলা তার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ‘জিহাদ কেন প্রয়োজন’, ‘কিতাবুল জিহাদ’, ‘একাকি শিকারি-লন উলফ’, ‘স্নিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ ও প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরীয়তের শত্রু’, লোন উলফ-বালোকোট-মিডিয়া-এইচকিউ’, ‘আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’ইত্যাদি ছাড়াও অসংখ্য উগ্রবাদী সহিংস জিহাদি প্রচারণার বই বিভিন্ন সময় আপলোড করত। এ ছাড়া সে নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিশিয়াল ও আন-অফিশিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে আইইডি, স্মোক বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলায় কৌশলগত ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করত।
সিটিটিসির প্রধান আরও বলেন, গ্রেপ্তার নাবিলা আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চিরপওয়্যারে অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা পেয়ে সেখানেও অ্যাকাউন্ট খুলে উগ্রবাদী প্রচারণা চালাত। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তার বিয়ের কথাবার্তা চললে সে ছেলেপক্ষকে জানায়, সে জিহাদের ময়দানে ডাক এলে সামনের সারিতে থাকবে এবং শহিদী মৃত্যু এলেও সে পিছু হটবে না এবং ছেলে এমন মতাদর্শের না হলে সে বিয়ে করবে না।