যশোরের কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাসেল হোসেনকে হত্যায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি

যশোরের কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাসেল হোসেন (২৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাসেল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের এক প্রেস নোটে এসব কথা জানানো হয়।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন মাসুদ হোসেন (১৯) ও অহিদ হাসান (১৯)। মাসুদের বাড়ি কেশবপুরের হাসানপুর আর অহিদের বাড়ি বিষ্ণুপুর গ্রামে। নিহত রাসেলের মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল ও তাঁকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে ডিবি।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে কেশবপুরের সাগরদাড়ি চিংড়া পূর্বপাড়া গ্রামের চিংড়া থেকে শ্রীপুরগামী (টেপার মাঠ) কাঁচা রাস্তার পাশের ধানক্ষেত থেকে রাসেলের লাশ উদ্ধার করে কেশবপুর থানার পুলিশ। রাসেল ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। আগের দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে কেশবপুরের উদ্দেশে বেরিয়ে যান রাসেল। রাত আনুমানিক ১১টা ৫০ মিনিট থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ১৭ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে ঘোপসানা রোড থেকে রাসেলের মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়। পরদিন সকালে লোক মারফত রাসেলের পরিবার জানতে পারে, চিংড়া ডেপার মাঠে একজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে রাসেলের মৃতদেহ শনাক্ত করে তাঁর পরিবারের লোকজন। পরে রাসেলের বাবা মাজিদ মোড়ল বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় মামলা করেন।

ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় তদন্তভার ন্যস্ত করেন। ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএম-এর দিকনির্দেশনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করতে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএম-এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম হাসানপুর ও বিষ্ণপুর থেকে মাসুদ ও অহিদকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাসেলের মোবাইল ফোন, হত্যাকাজে ব্যবহৃত একটি চাকু জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য মাসুদ ও অহিদ ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেন। এরপর তাঁরা ১৬ আগস্ট ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চাকু নিয়ে কেশবপুর দিয়ে খুলনায় যান। সেখানে ছিনতাই করতে না পারায় রাত আনুমানিক ১১টার সময় খুলনা থেকে ট্রাকে করে চুকনগর আসেন। তারপর মোটরসাইকেল চালক রাসেলকে ৩০০ টাকায় ভাড়া চুক্তিতে সাগরদাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যান। পথিমধ্যে মামলার ঘটনাস্থল চিংড়া টেপার মাঠের মধ্যে নিরিবিলি এলাকায় নিয়ে রাসেলকে চাকু/ছুরির ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করতে চান। রাসেল বাদ সাধলে একপর্যায়ে চাকু দিয়ে রাসেলের পেটে আঘাত করেন। রাসেল মোবাইল ফোনে বাচ্চার ছবি দেখিয়ে জীবন ভিক্ষা চাইলেও মাসুদ ও অহিদ তাঁকে চাকু/ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত জখম করে গলার শ্বাসনালি কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। পরে তাঁরা হত্যার কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে ঘোপসানা রোডে ফেলে দেন। ১০/১৫ দিন পর রাসেলের মোবাইল ফোনটি হাসানপুর বাজারে মুদিদোকানি শহিদুলের কাছে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন।