মৌলভীবাজারে একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তভার পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন আসামিকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর মধ্যে একজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৫ জুলাই রাত আনুমানিক আড়াইটার সময় শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইফতেখার ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন ১ নম্বর খলিলপুর ইউনিয়নের খঞ্জনপুর গ্রামে জনৈক জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন ইমাদ ভ্যারাইটিজ স্টোরের সামনের বারান্দায় কাগজের কার্টনের ভেতর হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা এবং মুখমন্ডল সাদা পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ ফেলে রাখা রয়েছে।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পান।

পরে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান এবং সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইয়াছিনুল হক ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হয়ে পরিদর্শন করেন এবং অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে নাম-ঠিকানা সংগ্রহের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু করেন।

এসআই ইফতেখার ইসলাম অজ্ঞাতনামা লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

লাশের ময়নাতদন্ত শেষে কোনো ওয়ারিশ বা উপস্থিত লোকজন লাশ শনাক্ত করতে না পারায় দাফনের জন্য মৌলভীবাজার পৌরসভা বরাবর পাঠান। পরে মৌলভীবাজারের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম লাশের দাফন সম্পন্ন করেন।

এ ঘটনায় এসআই ইফতেখার ইসলাম মৌলভীবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করলে সে পরিপ্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ একটি খুনের মামলা করে মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. মশিউর রহমানের ওপর অর্পণ করেন।

এরপর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মো. ইয়াছিনুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ তদন্ত টিম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই ক্লুলেস লোমহর্ষ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে সক্ষম হন।

তদন্তকালে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মশিউর রহমান অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য বেতার বার্তাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। পরে অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন দত্তগ্রামের মৃত আয়না মিয়ার ছেলে আইয়ুব আলী (৫৫) মর্মে শনাক্ত হয়। ভিকটিম আইয়ুব আলীর আত্মীয়স্বজন এবং দত্তগ্রামের অন্য লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় উল্লিখিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জনৈক মনসুর রহমান, অনুপ দাসসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বিশেষ পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে দত্তগ্রাম এলাকা থেকে সন্দেহভাজন আসামি মনসুর রহমান(৩০) এবং অনুপ দাসকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে গ্রেপ্তার আসামিদের নিবিড় এবং কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামিরা জানান, ভিকটিম আইয়ুব আলীর সাথে টাকাপয়সার লেনদেন এবং পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। ৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টার সময় আসামি মনসুর, অনুপ দাস ও পলাতক আসামি মামুদ ইকবাল মিলে আইয়ুব আলীকে হত্যা করেন।

৭ জুলাই গ্রেপ্তার আসামি মনসুর রহমান (৩০) এবং অনুপ দাসকে (৪০) বিধি মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করলে আসামী মনসুর রহমান নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে ৭ জুলাই পলাতক অপর আসামি মামুদ ইকবালকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে আজ ৮ জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়।

লোমহর্ষ এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।