পুলিশি হেফাজতে স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি মো. ফেরদৌস আহমেদ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর বাজার সংলগ্ন গোপালপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় মালেকা আক্তার (৩৫) নামে এক নারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এ সময় মালেকা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

এ ঘটনা দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট,অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। এ ঘটনায় মালেকা আক্তারের ভগ্নিপতি মো. তোতা মিয়া (৩৫) ফেরদৌসের বিরুদ্ধে সাটুরিয়া থানায় মামলা করেন।

এরপর সিআইডি এ হত্যা মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশনায় ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে মালেকার স্বামী মো. ফেরদৌস আহমেদের (২৫) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

সিআইডির একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে আসামি ফেরদৌস আহমেদকে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার বেগুন টিউরী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিক্টিম মালেকা আক্তার ও সে একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে পাঁচ (৫) বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। প্রায় দুই বছর আগে মানিকগঞ্জ সদরে পিংকী নামের একটি মেয়ের সাথে তার পরিচয়ের সুবাদে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি মালেকা বেগম জানতে পারলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে মো. ফেরদৌস প্রায় ৭ মাস আগে মালেকা বেগমকে তালাক দেয়। তালাকের ১ মাস পর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় পুনরায় তিনি মালেকা আক্তারকে বিয়ে করে ঘর সংসার করতে থাকেন। ইতোমধ্যে মালেকা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু ফেরদৌসের বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক বজায় থাকায় তাদের মধ্যে পুনরায় দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ কলহের জেরে ১৯ জুলাই রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেরদৌস মালেকা আক্তারের পেটে উপর্যুপুরি লাথি,ঘুষি মারলে তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যান। অবস্থা বেগতিক দেখে ফেরদৌস দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ির লোকজন তাদের কোন সাড়া না পেয়ে তাদের ঘরে যেয়ে মালেকা বেগমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে আসেন। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আসামিকে দ্রুততম সময়ে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।