শোকাবহ আগস্ট মাসে প্রদর্শনের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি ব্রড গেজ এবং একটি মিটার গেজ কোচ নিয়ে সারা দেশে প্রদর্শনের জন্য তৈরি করেছে এই জাদুঘরটি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনসংগ্রাম, স্বাধীনতাযুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। জাদুঘরটি ১ আগস্ট থেকে বিনা টিকিটে সবাই পরিদর্শন করতে পারবেন। খবর কালের কণ্ঠের।

আজ সোমবার দুপুরে গোপালগঞ্জ রেলস্টেশনে জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) মো. মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে দিন দিন রেলপথকে সংকুচিত করে সড়কপথের ওপর নির্ভরশীল বাড়ানো হয়। এতে সারা দেশে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। তারই উদ্যোগের ফলে সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, আদর্শ, তার আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার কর্মজীবন, রাজনৈতিক জীবন, আত্মত্যাগ সাধারণ মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে রেলওয়ে মহাপরিচালক বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আত্মত্যাগ এবং তার রাজনৈতিক দর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ জাদুঘরের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ পাবেন।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর রেলের ইতিহাসে প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। একটি ব্রড গেজ ও একটি মিটার গেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবন দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে একটি জাতির জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতিকে জীবন্ত করে রাখতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দুটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। উদ্যোগ দুটির একটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর, অন্যটি হলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার লেখা একটি থিম সং।

জানা যায়, সাধারণ দর্শনার্থীরা টাচ স্ক্রিনে আঙুল স্পর্শ করতেই ভেসে আসবে বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাষণ, তার জীবনের নানা দিকনির্দেশনা। প্রায় দেড় বছর সময় ধরে এটি তৈরি করা হয়েছে। দেশের ৮০ শতাংশ রেলস্টেশন গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে রয়েছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী জীবনী তুলে ধরতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রড গেজ কোচের জাদুঘরটি পশ্চিমাঞ্চল এবং মিটার গেজের জাদুঘরটি পূর্বাঞ্চলে প্রদর্শন করা হবে। শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত থাকবে।
জানা গেছে, ১ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জে জাদুঘরটি ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ দিন থাকবে। প্রতিদিন সকাল থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সবাই তা পরিদর্শন করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ঢাকা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল জাদুঘরটি ট্রায়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। দুটি কোচের একটি থাকবে দেশের পূর্বাঞ্চলে, অন্যটি থাকবে পশ্চিমাঞ্চলের রেলস্টেশনে।