বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার রায় দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ৩১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য শেখ কবির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার)।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান, র‍্যাব মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ অতিরিক্ত আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্ম আর পথ হারাবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মাথা উঁচু করে বলবে, আমরা বাঙালি। এটাই আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন। তিনি বলেন, ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হারাতে চাই না। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা একের পর এক সফল করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, আলোকিত করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বলেই আমরা সেটা করতে পেরেছি।

মুখ্য আলোচক শেখ কবির হোসেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন, বিশ্বাস করতেন। তিনি সারা জীবন সাধারণ মানুষকে ভালোবেসে গেছেন, তাঁদের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময় জেল থেকে যেসব নির্দেশনা দিতেন, বঙ্গমাতা তা নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। বঙ্গমাতা বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা চিহ্নিত করা এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু জনমানুষের মুক্তির কথা চিন্তা করেছেন, নিজের পরিবার ত্যাগ করেছেন এবং সারাটা জীবন শুধু কষ্টই করেছেন এ দেশের মানুষকে শান্তি দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, জাতির পিতার পেছনে থেকে যিনি সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি আমাদের বঙ্গমাতা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সিনিয়র সচিব বলেন, আমাদের উচিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার স্বপ্নের যে সোনার বাংলা গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন, সেই কাজকে ত্বরান্বিত করা, তাঁর হাতকে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, শোককে আমরা শক্তিতে রূপান্তর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি। এটাই হোক আজকের প্রত্যাশা।

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, বঙ্গবন্ধু ভালোবাসা দিয়েই মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে সারা জীবন ভালোবেসে গেছেন। তিনি মনে করতেন, মানুষকে বিকশিত করার জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ দরকার। তাই তিনি স্বাধীনতাসংগ্রাম করেছেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি কখনো চিন্তা করেননি বাঙালিরা তাঁকে হত্যা করবে।

পুলিশপ্রধান বলেন, আমাদের দেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দেশ আজ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি পুলিশ সদস্যের মনোবল চাঙা রয়েছে। দেশবিরোধী যেকোনো চক্রান্ত রুখে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। বঙ্গবন্ধু মহানায়ক বলেই আজ ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাজারবাগে বলেছিলেন, ‘তোমরা জনগণের পুলিশ’। জনগণের পুলিশ হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেশাদারত্বের সাথে পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ যেকোনো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে পেশাদারত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৫ অগাস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুসহ অন্য শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতির জোটের সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।