স্বর্ণের বার ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

২ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার গোবিন্দল জামটি বাজারের সোলাইমান জুয়েলার্সের মালিক মো. হাবু মিয়া (৫০) তাঁর দোকানের বিশ্বস্ত কর্মচারী বরুণ ঘোষের (৪৮) মাধ্যমে ৮টি তেজাবি স্বর্ণ (গলানো স্বর্ণ) তাঁতীবাজার স্বর্ণের দোকানে গয়না তৈরির জন্য পাঠান। বরুন ঘোষ সেগুলো কোমরে গুঁজে বেলা তিনটার দিকে মোটরসাইকেলে করে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে রওনা হন। তিনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জনি টাওয়ার-সংলগ্ন সাজেদা হাসপাতালের গলির রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে অটোরিকশা এবং পরে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে তাঁতীবাজার স্বর্ণের দোকানে যান। সেখানে দোকান বন্ধ থাকায় বরুণ আবার মোটরসাইকেলের কাছে এলেই ওৎ পেতে থাকা ডাকাত চক্রের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের পোশাক পরে এবং নিজেদের পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে বরুণের কাছে অবৈধ মালামাল আছে, এই অভিযোগে তাঁকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িতে তুলেই তাঁর চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে এবং মারপিট শুরু করে ডাকাতেরা। একপর্যায়ে বরুণের কাছে থাকা ৮টি স্বর্ণের বার, স্বর্ণ চালানের কাগজপত্র এবং ৩ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঝিলমিল এলাকার ফাঁকা স্থানে ফেলে পালিয়ে যায়। বরুণ বিষয়টি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে দোকানমালিক হাবু মিয়াকে জানায়। পরদিন হাবু মিয়া বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার পর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার) তাৎক্ষণিকভাবে ওই ডাকাত চক্রকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। তদন্তের শুরুতে কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রকে শনাক্তের চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার পুলিশ সুপারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএমের নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া, সাভার, ডিএমপির বিভিন্ন এলাকা এবং খুলনার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ডাকাতদের দেওয়া তথ্যে লুন্ঠিত ৫১ ভরি ০৬ রতি স্বর্ণ ও স্বর্ণ বিক্রির ১৫ লাখ টাকা এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।

জব্দ করা স্বর্ণের বার ও টাকা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তজেলা ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি করে।