পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গভবনে নিজ কার্যালয়ে ভাষণ দিচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক প্রতিরোধে পুলিশকে আরও সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে বুধবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই নির্দেশনা দেন। খবর বাসসের।

নিজ কার্যালয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম উপস্থিত ছিলেন। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

পুলিশের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশকে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, আইনি সেবা পেতে জনগণ যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পুলিশ-থানাকে জনগণের আইনি সহায়তা পাওয়ার প্রাথমিক কেন্দ্র উল্লেখ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, থানায় আসা বিপন্ন মানুষকে তাঁদের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে আপনাদেরকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করারও তাগিদ দেন মো. আবদুল হামিদ। থানায় এসে কোনো ব্যক্তি যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়, তা-ও নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।

পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে জনমুখী সেবা চালুর মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে সেবা প্রদান করা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে ইত্যাদি জনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পুলিশের জন্য অনেক সহজ হবে।

পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়াতে এ ধরনের আরও প্রযুক্তিনির্ভর জনমুখী সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

প্রথাগত অপরাধের সঙ্গে ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ও সাইবার বুলিংসহ সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি সংযোজন ও ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ দমনে উদ্যোগী হতে হবে পুলিশকে। এ ছাড়া মাদকের বিস্তার ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনেও বাংলাদেশ পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। আমি পিতা-মাতা, অভিভাবক ও পরিবারকেও এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তুলতে হবে। পুলিশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

নারী পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে প্রথম পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণের উদ্ধৃতি দেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, “মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারাও শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন”।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর মমত্ববোধ ও ভালবাসার এ উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমি বলতে চাই, আপনারা মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করবেন, ভালো ব্যবহার করবেন। তাঁদের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। আমি আশা করি, আপনারা মানবিক পুলিশ হয়ে জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণকে সেবা প্রদানে আরও ব্রতী হবেন।

তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। কোভিড-১৯ মহামারির মানবিক বিপর্যয়কালে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করে ১০৬ জন অকুতোভয় পুলিশ সদস্যসহ দেশ ও জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন সময়ে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন তিনি।

পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গভবনে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।