পাবনার চাঞ্চল্যকর সাইদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের কয়েকজন। ছবি: পাবনা জেলা পুলিশ

৭২ ঘন্টার মধ্যে হেমায়েতপুরের চাঞ্চল্যকর সাইদার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ছয়জনকে বিদেশি পিস্তল, চাকু, অন্যান্য আলামতসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য সাইদুর রহমান ওরফে সাইদার মালিথাকে (৫৫) ৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রকাশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পাবনা সদর থানাধীন চর বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের বাঁধের চাররাস্তার মোড়ে জনৈক হেলালের চায়ের দোকানের সামনে রাস্তার ওপর গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। সাইদুর পাবনা সদরের প্রতাপপুর গ্রামের মৃত হারান মালিথার ছেলে।

এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাবনা জেলা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে এসআই অসিত কুমার বসাক, পাবনা জেলা ডিবি এবং সদর থানার পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও হত্যায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য যৌথ আভিযানে নামে। আভিযানিক দল আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কক্সবাজার, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যায় অংশ নেওয়া ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন(৪২), মোহাম্মদ আশিক মালিথা(২৮), মো. রিপন খান(২৭), মো. নুরুজ্জামান রাকিব (২৪), মো. ইয়াসিন আরাফাত ইস্তি (২৬) ও মোহাম্মদ আলিফ মালিথা (২২)।

আসামিদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল এবং তিনটি তাজা গুলি, দুটি ফায়ারকৃত কার্তুজ, একটি বার্মিজ টিপ চাকু, তিনটি মোটরসাইকেল, আসামিদের পাঁচটি মোবাইল এবং ১০টি সিম জব্দ করা হয়েছে।

সাইদার হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পাবনা জেলা পুলিশ। ছবি: পাবনা জেলা পুলিশ

ওই আসামিরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথা চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর চাচাতো ভাই সাইদার মালিথাসহ তাঁর লোকজনদের ৬০/৭০ বিঘা সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগ দখল করে আসছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলাউদ্দিন মালিথা হেরে গেলে উক্ত সম্পত্তি তার চাচাতো ভাই সাইদুর রহমান ও তাঁর লোকজন তাঁদের দখলে নিয়ে চাষাবাদ করেন। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় সময় তাদের মধ্যে ছোটখাটো মারামারির ঘটনা ঘটে।
আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা তিনটি মোটরসাইকেল। ছবি: পাবনা জেলা পুলিশ

সর্বশেষ ঘটনার আগের দিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আলাউদ্দিনের ভাই সঞ্জু মালিথাকে সাইদার মালিথার লোকজন মারধর করে। এতে আলাউদ্দিন মালিথা ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদার মালিথাকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক আলাউদ্দিন মালিথার বাড়িতে এজাহারনামীয় আসামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আলাউদ্দিন মালিথার ভাতিজা আনোয়ার আহম্মেদ স্বপনকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন উপরোক্ত আসামিদের নিয়ে সাইদার মালিথাকে হত্যা মিশনে অংশগ্রহণ করে। আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন নিজে তার কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে সাইদার মালিথাকে গুলি করে ও গ্রেফতারকৃত অপর আসামিরা তাঁকে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। পরে আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁদের কাছ থেকে ওই আলামতগুলো জব্দ করা হয়। উপর্যুক্ত আলামতগুলো উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ওই আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।