র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ৭ জন।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছে, নতুন গড়ে ওঠা এক জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে ‘সশস্ত্র জিহাদের’উদ্দেশ্যে তাঁরা ঘর ছেড়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে চারজন ‘নতুন রিক্রুট’। আর তিনজন তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রশিক্ষণদাতা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র গত ২৩ আগস্ট বাসা থেকে বেরিয়ে আর না ফেরায় থানায় জিডি করেছিল পরিবার। পরে জানা যায়, নিরুদ্দেশ ওই তরুণদের কয়েকজনকে শেষবার দেখা গিয়েছিল চাঁদপুরে।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং সবকিছু বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সে সময় ধারণা হয়, ‘জঙ্গিবাদে জড়িয়েই’ লাপাত্তা হয়েছেন ওই তরুণেরা।

র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরাও তাঁদের খোঁজে মাঠে নামেন।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র মঈন বলেন, কুমিল্লার সাত তরুণের সঙ্গী ঢাকার কল্যাণপুরের শারতাজ ইসলাম নিলয় নামের আরেক তরুণ বাড়ি ছাড়ার এক সপ্তাহ পর গত ১ সেপ্টেম্বর ঘরে ফিরে আসেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক মাস ধরে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে র‌্যাব সাতজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

‘এরা সবাই নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। সংগঠনের নাম জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার)’।

র‌্যাব বলছে, নিষিদ্ধ দুই জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম থেকে বেরিয়ে কিছু লোক এ সংগঠন গড়ে তুলছেন। নতুন সদস্যদের বোঝানো হয়েছে, আগের সংগঠনগুলোর থেকে এই সংগঠন অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন হোসাইন আহম্মদ (৩৩), বারীর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের (৩৪), সেলস ও সার্ভিসের ব্যবসায়ী বণি আমিন (২৭), কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯), হাসিবুল ইসলাম (২০), তাঁদের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া গোপালগঞ্জের ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রোমান শিকদার এবং ঢাকার একটি ছাপাখানার কর্মী সাবিত (১৯)।

মঈন বলেন, গ্রেপ্তার তরুণদের মধ্যে প্রথম তিনজন আগেই উগ্রবাদে দীক্ষিত। পরে তাঁরা এ সংগঠনে যুক্ত হন। এঁরা সংগঠনে নতুনদের নিয়োগ (রিক্রুট) করতেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিতেন।

কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাত ও হাসিবুল এক বছর ধরে কুমিল্লার মসজিদুর কোবার ইমাম হাবিব উল্লাহর সংস্পর্শে ছিলেন। হাবিব উল্লাহই তাঁদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করেন, পরে গত ২৩ আগস্ট তাঁরা বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে গোপালগঞ্জ ও ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হওয়া হাসিবুল ও সাবিতের দেখা হয়। তবে হাবিব উল্লাহর সন্ধান র‌্যাব এখনো পায়নি।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘এই নতুন জঙ্গি সংগঠন ২০১৭ সালে গঠিত হয়। ২০১৯ সালে এর নামকরণ করা হয়। র‌্যাব এখন পর্যন্ত এই আঞ্চলিক নেতা ও নিচের সারির নেতাদের গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। এর প্রধান কে বা সুরা সদস্য কারা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’
এ সংগঠনের নামে ‘হিন্দাল’ শব্দটি কেন জানতে চাইলে র‌্যাবের পরিচালক বলেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা বিষয়টি বলতে পারেননি। সংগঠনের ওপরের সারির নেতারা হয়তো বলতে পারবেন।