আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সংগ্রামী নারী মোছাম্মৎ সাজেদা বেগম ও তাঁর ছোট মেয়ে খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলিকে সংবর্ধনা দেয় জয়পুরহাট জেলা পুলিশ। ছবি: পুলিশ নিউজ

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জীবনযুদ্ধে জয়ী নারী মোছাম্মৎ সাজেদা বেগম ও তাঁর ছোট মেয়ে খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলিকে সংবর্ধনা দিয়েছে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ।

পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে জেলা পুলিশ আয়োজিত আলোচনা ও সংবর্ধনা সভায় দুজনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাটের এসপি মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, পিপিএম (সেবা)। অনুষ্ঠানে গ্রামপুলিশ স্বামীর নির্মম খুনের পর সব প্রতিকূলতা জয় করে দুইটি মেয়েকে চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করার জন্য গ্রামপুলিশ সাজেদা বেগম ও তাঁর ছোট মেয়ে খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলিকে ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী দেন এসপি।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল থানাধীন ৩ নম্বর মামুদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আয়মাপুর, মিনিগাড়ি ও কোনাপাড়া গ্রামের দায়িত্বে থাকা গ্রামপুলিশ আব্দুল জলিল সরদার ২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর খুন হন। রাত্রিকালীন দায়িত্ব পালনের সময় কিছু দুর্বৃত্ত আব্দুল জলিল সরদারসহ তিন গ্রামপুলিশকে গলা কেটে হত্যা করে।
আব্দুল জলিল সরদার মারা যাওয়ার সময় তাঁর দুইটি মেয়ে মুর্শিদা পারভিন ওরফে জলি (১৮) ও খুর্শিদা পারভিন ওরফে পলি (১৩) এবং তার স্ত্রী সাজেদা বেগমকে রেখে যান। স্বামীর অকাল খুনে সাজেদা বেগম তাঁর সন্তানদের নিয়ে মহাবিপদে পড়েন।
পরে আব্দুল জলিলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা পুলিশ সদস্য মো. লোকমান হাকিমের সহায়তায় দুই মেয়েকে লেখাপড়া করান সাজেদা। আর সাজেদা জীবিকা নির্বাহের জন্য দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বহনের জন্য স্বামী আব্দুল জলিল সরদারের শূন্য পদে ক্ষেতলাল থানাধীন ৩ নম্বর মামুদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রামপুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন।
এ চাকরি করেই বড় মেয়ে পলিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ান সাজেদা। সেই মেয়ে ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।
ছোট মেয়ে পলি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (রুয়েট) থেকে ২০১৭ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।
সাজেদা বেগম অদ্যাবধি ক্ষেতলাল থানার মামুদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সত্যিকারের একজন জয়িতা। তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ তাঁকে সংবর্ধনা প্রদান করে।