পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার জোবাইদা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

নড়াইলের তিন বছরের শিশু নুসরাত জাহান রোজা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার সৎ মা জোবাইদা বেগম।
নুসরাত জাহান রোজা হত্যাকাণ্ডের একদিন না পেরোতেই তিনি দায় স্বীকার করেন।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে এ হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি।

জেলার লোহাগড়া উপজেলার গিলাতলা গ্রামে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শিশু নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরই নুসরাতের বাবা সজীব কাজী ও সৎ মাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। মৃত নুসরাতের দাদা আবুল খায়ের কাজী ওই রাতেই বাদী হয়ে সৎ মা জোবাইদা বেগমকে একমাত্র আসামি করে লোহাগড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে থানাপুলিশ জোবাইদাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিশু নুসরাত হত্যায় নিজের দায় স্বীকার করেন জোবাইদা।

২০১৬ সালে ইজিবাইক চালক সজীব কাজী বিয়ে করেন। সেই ঘরে ইয়াসিনের জন্মের দুই বছর পর নুসরাতের জন্ম হয়। ২০১৯ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সজীব কাজীর
বিচ্ছেদ হয়। এরপর ইয়াসিন ও দুই মাস বয়সী শিশু নুসরাতের আশ্রয় হয় দাদা-দাদীর কাছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে ভাই-বোনের মায়ের অভাব পূরণ করতে সজীব কাজী তার আপন ফুফাতো বোন জোবাইদাকে বিয়ে করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জোবাইদা বেগম জানান, সজীব কাজীর আগের ঘরে দুই সন্তান আছে জেনেও তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের প্রথম থেকেই তার ছেলে ইয়াসিনের প্রতি যতটা মমত্ববোধ ছিল মেয়ে নুসরাতের প্রতি ততটা ছিল না। দুই ভাই-বোন প্রতিদিন ঝগড়া করতো। ইয়াসিন বয়সে বড় হলেও তিনি নুসরাতকে বেশি শাসন করতেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার সময় ইয়াসিন ও নুসরাতের মাঝে ঝগড়া লাগে। ইয়াসিন নুসরাতকে হাত দিয়ে আঘাত করলে নুসরাত কাঁদতে থাকে। তখন জোবাইদা বেগম কান্না থামাতে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে। নুসরাতের নাক-মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। তারপর জোবাইদা বেগম শিশু নুসরাতকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাঁথা দিয়ে ঢেকে নিজের দোষ আড়াল করতে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের দাদা আবুল খায়ের কাজী বাড়িতে এসে নুসরাতকে গোসল করার জন্য ডাকতে থাকেন। নুসরাত কোনও সাড়া শব্দ না করায় তার দাদী ঘরে যেয়ে তাকে ডাকেন এবং কোলে নিয়ে দেখেন নুসরাত মারা গেছে।