পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার ৮জন। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

পাবনা জেলার আতাইকুলা থানা এলাকায় নগদের ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে।

জানা গেছে, পাবনায় নগদের ডিস্ট্রিবিউটর মো. মামুনুর রহমান, তার ব্যবসায়িক মাঠকর্মী ইয়াকুব ইসলাম বিশাল ও মো. তুহিন হোসেন গত ১৪ এপ্রিল পাবনা মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে একটি মোটরসাইকেল যোগে আতাইকুলা ও সাঁথিয়া থানা এলাকায় টাকা সরবরাহ করতে যাচ্ছিলেন। পথে বেলা আনুমানিক ১১টা ৪৫ মিনিটে আতাইকুলা থানাধীন মাধপুর হাইওয়ে থানার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে পাবনা টু ঢাকাগামী মহাসড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি ইয়ামাহা এফজেড-২ ভার্সনের কালো রংয়ের মোটরসাইকেলে থাকা তিন জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের মুখে তাদের গতিরোধ করেন এবং তাদের কাছে থাকা টাকাভর্তি দুটি ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যান। এর মধ্যে একটি ব্যাগের মধ্যে নগদ ৪ লাখ টাকা এবং অপর ব্যাগে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল।

এ ঘটনায় মো. মামুনুর রহমান আতাইকুলা থানায় একটি মামলা করেন।

মামলা হওয়ার পর পরই পাবনা জেলার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলমের নেতৃত্বে আতাইকুলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাফিজুর রহমান ও জেলা ডিবির অফিসার ইনচার্জ মো. এমরান মাহমুদসহ কয়েকজন পুলিশের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের নির্দেশ দেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলমের নেতৃত্বে আতাইকুলা থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা, স্থানীয় গোপন সূত্র এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সকল আসামিদের শনাক্ত করে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল পাবনা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাতভর অভিযান চালিয়ে মো. শিস ইসলাম (২২), মো. ইয়াছিন আলী ওরফে রাহাত (২১), মো. রায়হান হোসেন (২১), মো. ইমন হোসেন বাধন (২৪), মো. তানভীর হোসেন (২১), মো. শাহরিয়ার ইমতিয়াজ ওরফে রনি (২২), মো. ইমরান শেখ (২৪) ও মো. তুহিন হোসেনকে (২৭)
গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, দুইটি মোটরসাইকেল, হেলমেট, এবং একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ১নং আসামি শিস ইসলাম নগদ কর্মী তুহিন এবং ইমরান শেখের সঙ্গে
সপ্তাহখানেক আগে এ ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। ছিনতাই করার জন্য পলাতক আসামি রিজন আসামি রাহাতের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন সকাল বেলা আসামি মো. ইমরান শেখ কৌশলে আসামী শিস ইসলামকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপর নগদ কর্মী তুহিনকে লোকেশন সরবরাহ করেন। নগদ কর্মী তুহিনের সাথে শিস ইসলাম সহ অন্য আসামিরা মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হতে বিরত থাকেন। উদ্দ্যেশ্য তুহিনকে কোনোভাবেই যেন সন্দেহ না হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক নগদ কর্মী তুহিন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে রওনা দিলে আগে থেকে যুব উন্নয়নের সামনে অবস্থানকারী আসামি শিস ইসলাম ও তার সাথে থাকা রাহাত ও রায়হানকে অপর নগদ কর্মী ইমরান মোবাইলের মাধ্যমে লোকেশন দেন। তার দেওয়া তথ্য মতে তুহিন যুব উন্নয়নের সামনে দিয়ে যাওয়ার পরপরই আসামি শিস ইসলাম, রাহাত ও রায়হান একটি মোটরসাইকেলে এবং আসামি তানভির ও বাধন অন্য একটি মোটরসাইকেলে তাদের পিছু নেয়। একপর্যায়ে মাধপুর হাইওয়ে থানার সামনে পৌঁছালে অস্ত্র ঠেকিয়ে তুহিন এবং নগদ কর্মী ইয়াকুব ইসলাম বিশালের কাছে থাকা সর্বমোট ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যান।

পরিকল্পনা মোতাবেক শিস ইসলাম, রাহাত ও রায়হান পথ পরিবর্তন করে ভিতরের রাস্তা দিয়ে চলে যায় এবং বাধন ও তানভির মহাসড়ক দিয়ে পুনরায় পাবনার দিকে যান। পরবর্তীতে তারা আতাইকুলা থানাধীন শ্রীপুর বাজারের পাশে একটি ধান ক্ষেতে এসে মিলিত হন এবং ছিনতাইকৃত টাকা ভাগাভাগি করেন।

ছিনতাইয়ে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোটরসাইকেল আরোহী তিনজন সহ মোট চারজন আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্য বিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। অপর আসামিদের দুইদিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।