পুলিশের হেফাজতে মন্দিরে চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার একটি মন্দিরে চুরির ঘটনার মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

৩১ মার্চ রাতে দুপচাঁচিয়ার চেঙ্গা পালপাড়া শ্রী শ্রী দয়াময়ী কালীমাতা মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা হলে ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা শুরু করে দুপচাঁচিয়া থানা-পুলিশ। মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চুরির রহস্য উদঘাটন করে জড়িত ২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এবং তাঁদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া স্বর্ণের চুড়ি উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন দুপচাঁচিয়া থানার ছোটধাপ গ্রামের মৃত মোসলেমের ছেলে মো. সেলিম (৩৮) এবং কাহালু থানার জাঙ্গালপাড়া গ্রামের মৃত ইসাহাক আলীর ছেলে মো. এমরান খন্দকার (২৪)। তাঁদের ২ মার্চ রাত ৯টার দিকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ দুজন ৩১ মার্চ রাত ১১টার দিকে চুরির উদ্দেশ্যে বাইরে বের হয়ে ঘুরতে ঘুরতে চেঙ্গা পালপাড়া গ্রামের শ্রী শ্রী দয়াময়ী কালীমাতা মন্দিরে যান। সেখানে মন্দিরের বারান্দায় দান বাক্স দেখে তাঁরা প্রথমে ওই বাক্সের তালা কেটে বাক্স থেকে এক হাজার টাকা চুরি করেন। পরে তাঁরা একটি বাঁশ দিয়ে মন্দিরের পেছনের গ্রিলের পাতি ভেঙে মন্দিরে প্রবেশ করে কালীমাতার প্রতিমার হাতে থাকা ৩টি স্বর্ণের চুড়ি চুরি করে নিয়ে যান। পরে চুরি করা এক হাজার টাকা ভাগ করে দুজন ৫০০ করে নেন এবং একটি চুড়ি সেলিম ও দুটি চুড়ি এমরান নেন।

গ্রেপ্তার সেলিমের হেফাজত থেকে ১টি চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এমরানের হেফাজতে থাকা চুড়ি ২টি এমরান তাঁর বাড়ির পাশে নদীতে ফেলে দেন বলে জানিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে এমরান পুলিশের কাছে দাবি করেন, প্রতিমার হাত থেকে স্বর্ণের চুড়ি খুলতে গিয়ে তিনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন। এতে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর জ্বর আসে। তখন তাঁর মাকে ঘটনা খুলে বললে তাঁর মা পাশের বাড়ির দাদিকে ডেকে ঝাড়ফুঁক করে নেন এবং দাদির কথা অনুযায়ী স্বর্ণের চুড়িগুলো নদীতে ফেলে দেন।

এমরানের দেখানো মতে, আজ সোমবার সকালে ডিমশহর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জনৈক ইয়াকুব আলীর পুকুরের পাড় থেকে দান বাক্সের তালাকাটার ব্লেডটি উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মাদকসেবী। সেলিমের বিরুদ্ধে ৭টি মাদক ও চুরি মামলা এবং এমরান খন্দকারের বিরুদ্ধে ৩টি মাদক মামলার তথ্য থানার নথিপত্রে পাওয়া গেছে বলে পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে।

দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, পুলিশ সুপারসহ জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক তদন্ত কার্যক্রম তদারক করায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরি যাওয়া অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছিল। তাঁদেরকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করায় স্বল্পতম সময়ে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে। অপরাধীরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, সে বিষয়ে জেলা পুলিশ সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য যাতে বজায় থাকে, সে জন্য বগুড়া জেলা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।