দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার চার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কিশোরের লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত ওই কিশোরের নাম শাকিল (১৮)। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে। দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী সংসারের খরচ জোগাতে ইজিবাইক চালাতেন।

শাকিল হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন জনি (২০), শরাফাত (২০), ইব্রাহিম চান (২১) ও সাব্বির হোসেন মেহেদী (২২)। এ ছাড়া পুলিশ শাকিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা সুইসগিয়ার চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা সিএনজি ও লুন্ঠিত ইজিবাইকটি উদ্ধার করেছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ জানায়, গত ১৯ মে (শুক্রবার) সকাল ৬টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ খবর পায়, থানার মঠবাড়ী পদ্মা রেলওয়ে সেতুর নিচে সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের পরিত্যক্ত ইটভাটার ভেতরে এক কিশোরের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। লাশটি জাজিরা গ্রামের মৃত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে শাকিলের বলে জানা যায়। শাকিলের পরিবার জানায়, প্রতিদিনের মতো শাকিল ১৮ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফেরেননি।

পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার সময় দেখতে পায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শাকিলের মাথা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাতের ১১টি ক্ষত আছে। পেটের ডান পাশেও ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পরে শাকিলের বড় বোন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ কাজে নেমে পড়ে। ক্রাইম সিন পরিদর্শনের পর তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, অজ্ঞাতনামা আসামিরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাকিলকে নির্জন পরিত্যক্ত ইটভাটায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তদন্ত টিম ঘটনাস্থল ও এর আশপাশের এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
জানা যায়, আসামিরা নিজ নিজ মোবাইল বন্ধ করে বিভিন্ন জেলায় পালিয়েছে। এই অবস্থায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশের একটি দল টানা ২৪ ঘণ্টা ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ইব্রাহিম চান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে শরাফাত, ধামরাই থেকে সাব্বির হোসেন মেহেদী এবং সাতক্ষীরা থেকে জনিকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকু, আসামিদের ব্যবহৃত সিএনজি ও লুন্ঠিত ইজিবাইকটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসামিরা সবাই মাদকাসক্ত এবং কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৮ মে আসামিরা ইজিবাইক ছিনতাই করে তার ব্যাটারি বিক্রির টাকা দিয়ে মাদক সেবন করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন সন্ধ্যায় আসামিরা ইব্রাহিম চানের সিএনজি নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কাউটাইল ঘাটে টার্গেট ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করছিল। পরে শরাফাত ও জনি শাকিলকে পায়। শাকিল জনির পূর্বপরিচিত। তার ইজিবাইকই ভাড়া করে দুর্বৃত্তরা। জনি, শরাফাত ও সাব্বির শাকিলকে নিয়ে মঠবাড়ী পরিত্যক্ত ইটভাটায় যায়। অপরদিকে ইব্রাহিম চান সিএনজি নিয়ে ওদের পিছু পিছু আসে। তারপর ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শরাফাত সুযোগ বুঝে শাকিলের গলায় ছুরি চালায়। এরপর জনি শাকিলের পিঠে এলোপাতাড়ি চাকু দিয়ে আঘাত করে। তারপর জনি, সাব্বির ও ইব্রাহিম চান শাকিলের মাথা ও হাত-পা চেপে ধরে এবং শরাফাত শাকিলের গলায় ছুরি চালিয়ে মাথা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর শাকিলের ইজিবাইক নিয়ে হত্যাকারীরা সটকে পড়ে।