র‌্যাবের হাতে আটক দুই ডাকাত

রাজধানীতে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় ডাকাত দলের দুই সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ডেমরা থানার বাঁশেরপুল এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির সময় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলটির সরদার মো. উজ্জল হোসেন (৩৩) ও তাঁর অন্যতম সহযোগী মো. রাশেদকে (৩৭) আটক করেছে র‌্যাব-৩। খবর আজকের পত্রিকার।

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার, ম্যাগাজিন, গুলির খালি খোসা, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, প্লাস, টর্চ লাইট, স্ক্র ড্রাইভার, হেক্সো ব্লেড, ব্যাগ, দুটি তাজা গুলি, হাতুড়ি, গামছা, ইলেকট্রিক তার, রশি, মোবাইল ফোন, ককটেল, স্কচ টেপ এবং ৬টি ব্লাংক কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তাঁদের আটকের সময় র‍্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকি ডাকাতেরা পালিয়ে গেছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান চলছে।

আটকের পর তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আটক ডাকাতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ডাকাত দলের সর্দার মো. উজ্জল হোসেন পুরো দলটি পরিচালনা করেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে উজ্জলের নেতৃত্বে তাঁর দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ লুটপাট, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এই দলে মোট ১০ জন ডাকাত সদস্য রয়েছেন। তাঁরা গত ৫ মাসে নারায়ণগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, উজ্জল ও তাঁর সহযোগীরা ডাকাতির জন্য বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের ছদ্মবেশে পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন এবং ডাকাতির জন্য পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন বাড়ি টার্গেট করতেন। পরে তাঁদের টার্গেট অনুযায়ী বাড়িগুলোতে ডাকাতির জন্য গোপনে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার, বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালাতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে দুই ডাকাত জানিয়েছেন, ডেমরা এলাকায় সম্প্রতি তাঁরা একটি ৪ তলা বাড়িকে টার্গেট করেন। বাড়ির মালিক নিলুফা ইয়াসমিন বাড়ির অন্যান্য ফ্লোর ভাড়া দিয়ে ২য় তলায় নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটে একা বসবাস করেন। তাঁর স্বামী একজন প্রবাসী। সম্প্রতি তাঁর দুই ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন যাবৎ বাড়িটিতে একা বাস করে আসছিলেন তিনি। উজ্জল ও তাঁর দল গত এপ্রিল মাস থেকেই এই বাড়ি টার্গেট করেন। এরপর তাঁরা বেশ কয়েকবার বাড়িটির ডিশ সংযোগের তার কেটে দেন এবং বাসায় নক করে ডিশের মেকানিক পরিচয়ে ডিশ সংযোগ ঠিক করার নামে বাসাটি পর্যবেক্ষণ করেন।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ডাকাত দলের সর্দার উজ্জল হোসেন মূলত ব্যানার, বিলবোর্ড তৈরির ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে কাজ করেন। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা উজ্ল তাঁর মামার স্টিলের আসবাব তৈরির কারখানায়ও ৫ বছর কাজ করেছেন। এরপর ছন্নছাড়া জীবনযাপন শুরু করে ছিনতাই, চুরি, মাদকাসক্তির মতো বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। একসময় অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে ডাকাত চক্র গড়ে তোলেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ এই ডাকাত চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে‌ আসছেন। এ ছাড়া আটক রাশেদ মূলত রংমিস্ত্রির কাজ করেন এবং কাজের অজুহাতে বিভিন্ন বাড়িতে পর্যবেক্ষণ চালান এবং ডাকাতির শেষে স্থান ত্যাগের রাস্তাও ঠিক করেন। উজ্জলের নামে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে মুক্তির পর ডাকাতির পেশা বেছে নেন।